নাটোর: নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও পৌর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে ঘিরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
শনিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে শহরের আলাইপুরস্থ হাফরাস্তা এলাকায় জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় মারধর ও ইটের আঘাতে কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, যুবদল নেতা রনি ব্যাপারী গুরুতর আহত হন।
এছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম শরিফ ও রনি ব্যাপারীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও নাটোর শহর যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সায়েম হোসেন উজ্জলসহ ৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। রুহুল আমিন বিপ্লব ও সায়েম হোসেন উজ্জল নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছিলেন নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য রাখছিলেন। সেসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
অপরদিকে একই সময়ে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উপশহর মাঠে ডাকা শান্তি সমাবেশে যোগদান করতে জেলা-উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় তারা সেখানে অবস্থান করে সমাবেশ শুরু করে।
সেখানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রত্মা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন মোল্লা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু চিত্ত রঞ্জন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক বিউটি আহমেদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ, সাধারণ সম্পাদক শরিফুর ইসলাম শাহিনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ অবস্থায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল ছোড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময়ে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।
ঘটনার পর থেকে নাটোর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি, ডিবির ওসি আবু সাদাত ও নাটোর থানার ওসি তদন্ত আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরের পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নাটোর উপশহর মাঠে মঞ্চ তৈরির সময়ই বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দিনগত রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায় এবং মঞ্চ ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর শান্তি রক্ষার জন্য তারা উপশহর মাঠ ছেড়ে দিয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে তাদের অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বড় মিছিলসহ বিএনপি অফিসের দিকে আসতে থাকে। নাটোর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধা দিলে তারা পুলিশী ব্যারিকেড ভেঙে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আক্রমণ করে।
এসময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল ছোড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
ঘটনার সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজের অবস্থান ও ক্ষমতা জানান দিতে বিএনপির ওপরে একের পর এক হামলা করছে। মত প্রকাশের নাগরিক অধিকার টুকুও আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বাংলানিউজকে জানান, তাদের পূর্ব নির্ধারিত নাটোর উপশহর মাঠের শান্তি সমাবেশ করার জন্য তারা মিছিলসহ যাওয়ার সময় নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশী বাধার কারণে তারা সেখানেই শান্তি সমাবেশ করছিলেন। এসময় শান্তি সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে। জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন এসময় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। তিনি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিনকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
এদিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরের বাসা ছেড়ে চলে যান। এ সময় তিনি এসব ঘটনার জন্য সরাসরি সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ টি এম মাইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শহরের আলাইপুর এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছিল। সমাবেশে চলাকালে দুপক্ষই ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুলি ছোড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকমুখে শুনেছি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তারা কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তবে কোন পক্ষ থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে তা তারা জানেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৩
আরএ