ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

খাগড়াছড়ি আ. লীগের বর্ধিত সভা: গুরুত্ব পায় দলের একাধিক নেতার ‘আলাদা বৈঠক’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
খাগড়াছড়ি আ. লীগের বর্ধিত সভা: গুরুত্ব পায় দলের একাধিক নেতার ‘আলাদা বৈঠক’

খাগড়াছড়ি: আগামী সংসদ নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় আনা এবং বিএনপির সন্ত্রাস নৈরাজ্য প্রতিরোধ করে দলকে সংগঠিত করাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে আলোচনায় প্রাধান্য পায় দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন সংক্রান্ত গ্রুপিংসহ দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়গুলো।

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা যায়।  

এর আগে দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ‘আলাদা বৈঠক’ নিয়ে স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন রয়েছে। তবে তা ভালোভাবে নেয়নি জেলা আওয়ামী লীগ।

রোববার (০৯ এপ্রিল) বিকেলে শহরের কদমতলী এলাকায় অবস্থিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ গেস্ট হাউসে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

বর্ধিত সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনা এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দলকে শক্তিশালী করা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে জেলা থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে দলের বাইরে একাধিক নেতার শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড গুরুত্ব পায়। তৃণমূল নেতারা বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি জানিয়ে বিরোধ সৃষ্টি না করে দলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

একাধিক সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ি আসনে কাকে দল কাকে মনোনয়ন দেবে তা প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবে। তবে জেলা থেকে যে কেউ মনোনয়ন আশা করতে পারে। কিন্তু একাধিক নেতা দলীয় আলোচনার বাইরে গিয়ে দল বিরোধী ব্যক্তিদের সাথে আলাদা বৈঠক করা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। একটি পক্ষ উদ্দেশ্যেপ্রনোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখা করছে, যা দল ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে।

বর্ধিত সভায় উপস্থিত মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমি আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিন মোকাবেলা করার কথা বলেছি। আপনি (আলাদা বৈঠককারী) আওয়ামী লীগের মূল স্রোতের সাথে যোগাযোগ না করে বাইরে গিয়ে বৈঠক করলে তা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। এখানে সেখানে বৈঠক না করে একসাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। পর্যটন মোটেলে দলের বৈঠক হতে পারে না। আর দলের মনোনয়ন কাকে দেবে তার সম্পূর্ণ এখতিয়ার আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর। দল নিয়েতো ষড়যন্ত্র করা যাবে না।

অপর নেতা জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মো. নুরুল আজম বলেন, বর্ধিত সভায় আমি বলেছি, এটি নির্বাচনী বছর। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা মোকাবেলা করে কিভাবে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। অন্য কিছু নয়। যারা দলের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছি।

সভায় সাবেক বিতর্কিত পৌর মেয়র মো. রফিকুল আলম ও সাবেক বিএনপি নেতা মো. আমীন শরিফসহ দলের একাধিক নেতার বৈঠক করা নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নিয়ে কটাক্ষকারী সাবেক মেয়র মো. রফিকুল আলম ও জেলা বিএনপির সাবেক নেতা মো. আমিন শরীফকে নিয়ে দলের একাধিক নেতার বৈঠক করা নিয়েও আলোচনা হয়। দলের নেতাকর্মীদের মারধর, হামলা-মামলা, নির্যাতনকারী রফিক কেউ না হওয়ার পরও তাদের সাথে জোট বেঁধে বৈঠক করা দল বিরোধী কাজ।  

সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি তুলে ধরে কয়েকজন নেতা বলেন, তিনি (কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা) বলেছেন যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারে। আলোচনা করে মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাই একসাথে কেন্দ্রে নামের তালিকা পাঠাতে পারে। কিন্তু বাইরে গিয়ে দল বিরোধী বৈঠক কাম্য নয়। এখন আরো সংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য মোকাবেলা করতে হবে। তিনি দ্রুত দলের কাউন্সিল করার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

তবে দলের বাইরে বৈঠক করা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও সহ সভাপতি মনির হোসেন ও চাইথোঅং মারমা ছাড়া অন্যরা কেউ বর্ধিত সভায় যোগ দেননি।  

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনির হোসেন বলেন, অনিয়মতান্ত্রিক, অসাংগঠনিকভাবে দল পরিচালনাসহ আগামী নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতি বিষয়ে বর্ধিত সভায় কথা বলেছি। ১১ জন সহ সভাপতির মধ্যে ৮ জনকে নিয়ে যে আলাদা বৈঠক হয়েছে সেখানে ষড়যন্ত্রের কিছুই ছিল না।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন কে পাবে তা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ নেই। এটি হাই কমান্ড দেখবে। কিন্তু মনোনয়ন নিয়ে দলে বিভক্তি মেনে নেওয়া যাবে না। আর যে সব সময় বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নিয়ে কটাক্ষ করে দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা, নির্যাতন করে সেই রফিক (সাবেক পৌর মেয়র) এবং বিএনপি-জামায়াত নেতা মো. আমীন শরিফ নিয়ে যদি দলের নেতাদের বৈঠক করতে হয় তবে তা দুঃখজনক। এদিকে উক্ত বর্ধিত সভা মূলতবি করা হয়েছে জানিয়ে ঈদের পর পুনরায় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল পর্যটন মোটেলে জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বৈঠক করেন। মোটেলের হলরুমে উক্ত বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জাহেদুল আলম, অ্যাডভোকেট নাসির আহমেদ উদ্দিন, খগেশ্বর ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুল হক, সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, তপন কান্তি দাশ, জেলা কমিটির সদস্য জয়নাব দেব উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দল, আগামী মনোনয়নসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ হয় বলে জানা যায়। এর আগে রন বিক্রম ত্রিপুরার বাসায় আরো একটি বৈঠক হয়। এতে উপরের নেতাদের বাইরে কংজরী চৌধুরী, মনির হোসনেসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে উক্ত বৈঠকগুলো নিয়ে নাখোশ জেলা আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
এডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।