ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

‘আওয়ামী পরিবারের লোকেরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
‘আওয়ামী পরিবারের লোকেরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু-ফাইল ফটো

ঢাকা: দেশের টাকা লুট করে বিদেশের পাচার করে আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।

তিনি বলেন, যারা ব্যাংক ও মানুষের হক লুণ্ঠন করেছেন, যারা কানাডায় বেগম পাড়া করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করেছেন তারা আওয়ামী পরিবারের সদস্য।

আজকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে যে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে, সেই টাকা দিয়ে আওয়ামী পরিবারের লোকেরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এই চুরির বিরুদ্ধে যাতে কেউ মামলা না করতে পারে এজন্য শেখ হাসিনা সংসদে আইন পাস করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর নেই।

বুধবার (২৪ মে) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জোবাইদা রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ১০ দফা দাবির সমর্থনে আয়োজিক অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী নারী দল।

অবস্থান কর্মসূচিতে বরকত উল্লাহ বুলু আরও বলেন, গত তিন-চরদিন ধরে দেশ তাণ্ডব চলছে। আগে বলেছেন ওনারা (আওয়ামী লীগ) শান্তি মিছিল করবেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের এখন বলছেন প্রতিরোধ করবেন। সেই প্রতিরোধ করে আমাদের (বিএনপি) নেত্রকোনা ও পটুয়াখালীতে সভা করতে দেয়নি। নেত্রকোণায় ৩৭ জন নেতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পটুয়াখালীতে ৪২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজবাড়িতে আমাদের নেতা জয়নুল আবেদিন ফারুকের গাড়িতে হামলা হয়েছে। অনেক কষ্ট করে তারা সেখানে সভা করেছেন। পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল।

তিনি বলেন, গতকাল ধানমন্ডিতে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ নির্মমভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। আমাদের ৪২ জন নেতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টিয়ার গ্যাস, বুলেট ছুড়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। রাজশাহীতে বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নেত্রকোনায় বিএনপি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব নমুন হচ্ছে, আপনারা (আওয়ামী লীগ) দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চান।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, এই সংসদকে আরও পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত করে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে৷ ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান সংসদে প্রবেশ করলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তারপর সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। মানুষের গণতান্ত্রিক বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সব হরণ করলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত করে দেশে এক দলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন।

বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের কবর রচনা করলেন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের ক্ষমতায় এসেছেন। কাউকে হত্যা বা ক্যু করে তিনি ক্ষমতায় আসেননি। জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি এসে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতন অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি, বাক স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর আবার বহুদলীয় গণতন্ত্রণ প্রবর্তন করার পর দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি করার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তিনি সেদিন আওয়ামী লীগকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তাই আজকের এই আওয়ামী লীগ শেখ মুজিব, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর আওয়ামী লীগ নয়, এই আওয়ামী লীগ হচ্ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুদানকৃত আওয়ামী লীগ। যে আওয়ামী লীগ করে আজকে শেখ হাসিনা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে আছেন। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) উচিত আজীবন জিয়া পরিবারের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকা।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রেখেছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েসি রায় দিয়ে তাকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছেন। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) মনে থাকা উচিত, ইরানের আয়েতুল্লা খামেনি প্যারিসে বসেই ইরানের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। তিনি যেদিন ইরানের এসেছেন সেই দেশের জনগণ তাকে গ্রহণ করে অভ্যর্থনা দিয়েছে। তারেক রহমানও সাত হাজার মাইল দূরে থেকে দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছেন। তিনি যখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন, তখন আওয়ামী লীগের গুন্ডা-পান্ডাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আজকে দেশের যে অবস্থা, আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। এর মুক্তির জন্য আমরা সব গণতান্তিক দলগুলো নিয়ে বিভিন্নভাবে অন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে আছি। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই এই সরকারের পতন হবে। শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। এটিই হলো আমাদের এক দফা।

তিনি আরো বলেন, এই দেশের সব উন্নয়ন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার হাত দিয়ে এসেছে। আর আপনারা (আওয়ামী লীগ) করেছেন লুণ্ঠন। বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। আজকে যদি দেশের মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয়, শেখ হাসিনার পরে আওয়ামী লীগের নেতা কে হবেন, কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু জিয়াউর রহমানের পর বিএনপির নেতা হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া, তারপর তারেক রহমান। এরপর আগামী ১০০ বছর পর্যন্ত বিএনপির নেতা কে হবে মানুষ তা বলতে পারবে।

তিনি বলেন, আজকে আমরা যে আন্দোলন সংগ্রাম করছি, এটি জনগণের আন্দোলন। আজকে এটি বিএনপির আন্দোলন নয়। এটি সব গণতান্ত্রিক দলের, সব গণতান্ত্রিক মানুষের, সব খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলন। শেখ হাসিনা আপনি বাঘের পিঠে সোয়ার হয়ে আছেন। এই বাঘের পিঠ থেকে নামা কঠিন। বাঘের পিঠ থেকে নামতে হলে আপনাকে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আপনার মুক্তির একমাত্র রাস্তা বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবার।

জাতীয়তাবাদী নবীন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল রানার সঞ্চালণায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, তাঁতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষক দলের সহ-সভাপতি ভিপি ইব্রাহীম, মৎসজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম আহমেদ ও সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।