ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

তেজস্বী ছাত্রনেতা থেকে রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
তেজস্বী ছাত্রনেতা থেকে রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’

ঢাকা: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে যে কজন ছাত্রনেতা পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের তটস্থ রাখতেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সিরাজুল আলম খান।

৮২ বছর বয়সী বাংলাদেশের রাজনীতির ‘দাদা ভাই’ খ্যাত সিরাজুল আলম খান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন শুক্রবার দুপুর আড়াইটায়।

 

রাজনীতিতে সিরাজুল আলম খানের অভিষেক হয়েছিল ১৯৫৯ সালে স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। সেই বছর হন ছাত্রলীগের সদস্য।  

এরপর ১৯৬১ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এরইমধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের দুই সহযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদকে নিয়ে গড়ে তোলেন গোপন সংস্থা ‘নিউক্লিয়াস’।

জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করতে ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করেন।

এরপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অপরাপর ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মিলে গড়েন মুজিব বাহিনী। এই বাহিনীর সরকারি নাম বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স। এর প্রধান ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, আর উপ-প্রধান ছিলেন সিরাজুল আলম খান।  

কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়।

বঙ্গবন্ধুর শিষ্য হিসেবে রাজনীতিতে বিকশিত হয়ে শীর্ষে উঠা সিরাজুল আলম খান এরপরই হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিরোধী।

জাসদের প্রবল বিক্ষোভে পড়তে থাকেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পরে খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতি চলে যায় পাকিস্তানপন্থায়।

এ সময় থেকেই রাজনীতিতে অপাংক্তেয় হয়ে উঠতে শুরু করেন সিরাজুল আলম খান। আর রাজনীতি থেকে তার চিরবিদায় রচিত হয় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, যখন কর্নেল তাহেরের হাত থেকে পাল্টা অভ্যুত্থানের পর জিয়াউর রহমানের হাতে চলে যায় দেশের সামরিক ক্ষমতা।  

সাবেক জাসদ নেতা ও বর্তমানে কলামিস্ট মাহবুব কামাল লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মৃত্যু হয় সিরাজুল আলম খানেরও। তবে সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু শারীরিক নয়, সেদিন আসলে তার রাজনীতির মৃত্যু ঘটে। ১৫ আগস্ট ক্লিনিক্যালি ডেড হলেও সিরাজুল আলম খানের পরিপূর্ণ রাজনৈতিক মৃত্যু হয় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।

সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষদিকে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৬ সালে জিয়ার আমলে আবার গ্রেপ্তার এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান।  

১৯৯২ সালে বিদেশে যাওয়ার আগে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪ মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে চারমাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান।

রাজনীতির এই রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খান দাদাভাই নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।  

তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক আর মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

বাবার কর্মস্থল সূত্রে কিশোরকাল কাটে খুলনায়, ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ভর্তি হন।  

সিরাজুল আলম খান ১৯৬৫ সাল থেকে জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না। আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫, জুন ৯, ২০২৩ 
এনবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।