ঢাকা: নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাত্র দেড় বছরের মাথায় ভাঙনের মুখে পড়েছে গণঅধিকার পরিষদ। শীর্ষ দুই নেতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে দলের মধ্যে অস্থিরতা চলছে বেশ কয়েকদিন ধরে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুর একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন। এর মধ্যে আবার রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। তার জায়গায় ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৯ জুন) রাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্প্রতি দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেন। নিজেদের ফেসবুক আইডিতেও তারা একে অপরকে দোষারোপ করেন। দুই নেতার বিরোধে দলে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার (১৮ জুন) ঢাকায় রেজা কিবরিয়ার বাসভবনে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু সেখানে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সমস্যা সমাধানের বদলে জটিলতা আরও বেশি সৃষ্টি হয়।
দলের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তা ছাড়া নুরও ফেসবুকে পোস্টে বলেছেন, রেজার বাসায় হওয়া বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোববারের বৈঠকে রেজা কিবরিয়া দলের সদস্য সচিব নুরুল হকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া রেজা কিবরিয়া দলের তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেন।
অন্যদিকে নুরুল হক পাল্টা অভিযোগ করেন, রেজা কিবরিয়া অনেক দিন ধরে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সে জন্য তিনি অর্থ পাচ্ছেন দলের কর্মকাণ্ডে সময় না দেওয়ার অভিযোগও করেন রেজার বিরুদ্ধে।
রোববার বৈঠকের পর রেজা বিদেশে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। তাই এসব ব্যাপারে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রেজা বিদেশ চলে গেলে সোমবার বৈঠকে বসে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা, যার সভাপতিত্ব করেন নুরুল হক। এ বৈঠকেই রাশেদ খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। একই সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে দলের কাউন্সিল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে এ বৈঠকে। পরে দলীয় প্যাডে এ ঘোষণা দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। একইসঙ্গে ফেসবুকেও প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তিটি।
ভাঙনের ব্যাপারে নুর বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙান বলতে আসলে তেমন না। দলের প্রয়োজনে রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে আমরা রেজা কিবরিয়াকে দলে যুক্ত করেছিলাম। কিন্তু দলের প্রতি সাংবিধানিক কোনো কাজ করেননি। দলকে সময় দেননি। বরং তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক অপতৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আমাদের দল ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি আমাদের চিন্তা-ভাবনার পরিপন্থী কাজ শুরু করেছিলেন। যে কারণে তাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, যেখানে আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয়, সেখানে রেজা কিবরিয়া বিএনপি ভাঙার প্রক্রিয়া করছেন। বিএনপির কিছু দলছুট নেতাদের নিয়ে তিনি নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন উকিল আব্দুস সাত্তারের মতো। এসব তো বিএনপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতির একটা কারণ। আমরা তো রেজার মতো এমন কিছু করতে পারি না বা তাকে সাপোর্ট দিতে পারি না।
রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তথা মোসাদের সঙ্গে নুর বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রেজা কিবরিয়া। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, যে সংস্থার অফিসিয়াল কোনো সক্রিয়তা এ দেশে নাই, সেটার সঙ্গে আমি কীভাবে জড়িত থাকতে পারি? আমি তো দেশের বাইরে সব সময় যেতে পারি না। একবার গিয়েছিলাম ওমরা করার জন্য। এখন উনি চাপে পড়ে আমার নামে মিথ্য ছড়াচ্ছেন।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা বাংলানিউজ জানতে চাইলে নুর বলেন, যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তখন হয়ত চিন্তা করবো। গণ অধিকার পরিষদের ব্যানারে নাকি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নির্বাচন করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি আমরা আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
টিএ/এমজে