ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রতিপক্ষ নয়, সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে টানাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ: আরাফাত

নিশাত বিজয় ও ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
প্রতিপক্ষ নয়, সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে টানাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ: আরাফাত

ঢাকা: আগামীকাল সোমবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত।

তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলটির অন্যতম ‘থিঙ্ক টাংক’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সামাজিক সংগঠন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।

ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন, ভোটারদের ভাবনা, নির্বাচনী পরিকল্পনা ও ভোট পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দেন বাংলানিউজকে। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন এ সময়। নির্বাচনকালীন ও পরবর্তী ভাবনা সম্পর্কেও জানান। বাংলানিউজের সঙ্গে আরাফাতের সাক্ষাতকারের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: প্রচারণা শেষ, গণসংযোগের পরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি নৌকার নিশ্চিত জয় দেখছেন?

অধ্যাপক আরাফাত: ঢাকা-১৭ আসনে নৌকার যে নিশ্চিত জয় হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই এলাকায় নৌকার জনপ্রিয়তা অবিশ্বাস্য। আমি নিজে ভোটের মাঠ নিয়ে বিভিন্ন সার্ভে করেছি। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সার্ভে করিয়েছি। তাদের কাছ থেকে যে রিপোর্ট পাচ্ছি- এখানে নৌকার বিজয় নিশ্চিত। যদি শতভাগ মানুষ ভোট দিতে আসতো তাহলে ৮০ শতাংশ ভোট আওয়ামী লীগের পক্ষে পড়তো।

ঢাকা-১৭ আসন খুবই জটিল একটা এলাকা। গুলশান, বনানী এবং বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় থাকেন অভিজাত নাগরিকরা। কিন্তু বাস্তবে আপনি নির্বাচিত হবেন নিম্ন আয়ের এবং দরিদ্র মানুষের ভোটে। এই আসনের তিন লাখ ২৫ হাজার ভোটারের মধ্যে অভিজাত এলাকার ভোটার মাত্র ৪৭ থেকে ৪৮ হাজারের মতো। বাকি বেশিরভাগ ভোটারই কালাচাঁদপুর, নদ্দা, করাইল, আদর্শ নগর, ভাষাণটেক, মাটিকাটা এবং মানিকদি এসব এলাকার।

বাংলানিউজ: বিভিন্ন নির্বাচন ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু ১৭’র উপ-নির্বাচনে ব্যালেটের ব্যবহার আপনি কীভাবে দেখছেন?

অধ্যাপক আরাফাত: ইলেকশন কমিশন যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তবে এক হিসেবে ঠিকই আছে; কারণ ব্যালট পেপার আমরা তো বহুবার নির্বাচন করেছি। আর ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সিভিল সোসাইটির অনেকের সমস্যা ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইভিএম’র পক্ষে। কারণ, ইভিএম নিয়ে অনেক অপ্রচার ছিল। তবে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সমস্যাগুলো আমরা দেখে এসেছি তার অনেকগুলো সমস্যার সমাধান ইভিএম আসলে দেয়।

বাংলানিউজ: যদিও সংক্ষিপ্ত সময় তারপরও ঢাকা-১৭ আসন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

অধ্যাপক আরাফাত: এ আসনের বিভিন্ন এলাকায় আমি গিয়েছি। সেখানে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জেনেছি। বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এই সমস্যাগুলোকে আমি চিহ্নিত করেছি। এবং সেগুলোকে কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। যদি আমি নির্বাচিত হই তাহলে সে সমস্যাগুলোকে ধাপে ধাপে বাছাই করে কাজ করা শুরু করব।

যতটুকু পারি আমি এগিয়ে যাব। যদিও আমি বিষয়টা পাঁচ মাসের হিসাব করছি না। কারণ সামনে তো জাতীয় নির্বাচন। আমি আশাবাদী এবার যদি আমি নির্বাচিত হই, তাহলে সামনে যে জাতীয় নির্বাচন আসছে সেখানে আমার দল পুনরায় আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে এই সমস্যাগুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাব।

বাংলানিউজ: নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ দেখছেন কী?

অধ্যাপক আরাফাত: চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে। বেশি জনপ্রিয় হলে একটা সমস্যা থাকে। যখন ভোটাররা দেখে তার সামনে-পিছে ডানে বামে সবই নৌকা, তখন তিনি চিন্তা করে আমি ভোট না দিলেও হবে অন্য কেউ ভোট দিলে নৌকা পাশ করে যাবে। এত ভোটার, নৌকা তো এমনি জিতবে। এরকম যদি সবাই ভাবা শুরু করে তাহলে সমস্যা হবে। তাই সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আমার মূল ফোকাস নৌকার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা।

বাংলানিউজ: আপনার প্রতিপক্ষরা বলছেন ভোট সুষ্ঠু হবে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

অধ্যাপক আরাফাত: জিতলে ঠিক, আর হারলে সুষ্ঠু হয়নি! এটাকে বলে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সিন্ড্রোম’। বিএনপি-জামায়াতের ছিল। সেখান থেকে আমরা দেখতে পাই তা আন্তর্জাতিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিতরে ছড়িয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশের একটা রাজনৈতিক সমস্যা। কেউ হেরে গেলে সব সময় বলে যে ইলেকশন ভালো হয়নি। তার মানে হচ্ছে সবাইকে জিতিয়ে দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে আওয়ামী লীগের অধীনে ইলেকশন সুষ্ঠু হয়েছে। এই বিষয়টা এখন সবাই বোঝে।

বাংলানিউজ: আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণকে ভোটমুখি এবং দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে আওয়ামী লীগ কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

অধ্যাপক আরাফাত:  ভোটারদের সঙ্গে মিলেমিশে সাংগঠনিকভাবে ভোটারদেরকে আরও বেশি ভোট দানে উদ্বুদ্ধ করব। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের আগে পুরো পাঁচ মাস ধরে আমার আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির কাজ চলতে থাকবে। যাতে করে নির্বাচনের আগে এসে আমার চিন্তা করতে না হয় যে ভোটাররা কেন্দ্রীয় ভোট দিতে আসবে কিনা। আর একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কমিটেড। সঙ্গে আমরাও কমিটেড। সবার কাছে আহ্বান, যাতে আমাদেরকে আস্থায় নিয়ে আসেন। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন হোক। আর যারা নির্বাচন করতে আসবে তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাবো।

বাংলানিউজ: ঢাকা-১৭ আসনের ভোটারদের উদ্দেশ্যে আপনার আহ্বান কী?

অধ্যাপক আরাফাত: আমি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জেনেছি- দীর্ঘদিন এই আসনে আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোনো ক্যান্ডিডেট ছিল না। যিনি ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় অনেক বিষয়ে তিনি কাজ করতে পারেননি। যে কারণে ঢাকা ১৭ আসনে একটা অভিভাবকহীন অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ফলে এই আসনের সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে একটা হতাশার জায়গা আমি লক্ষ্য করেছি। এই হতাশা ভোটার এবং সাধারণ জনগণের মধ্যেও হতে দেখেছি। আমার জনগণের প্রতি বক্তব্য হচ্ছে, আমি আওয়ামী লীগের লোক এবং আপনাদের লোক। আমি যদি সুস্থ থাকি তাহলে আমাকে সব সময় আপনারা পাবেন। আপনাদের সব সমস্যাগুলোর সমাধান আমি ধীরে ধীরে করব।

বাংলানিউজ: ভোট কেন্দ্রে ভোটারদেরকে নিয়ে আসতে আপনি কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

অধ্যাপক আরাফাত:  প্রথমত ভোটারদের কাছে ভোটার স্লিপ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ভোটাররা কোন কেন্দ্রে এবং কোন বুথে ভোট দিবেন এটা গাইড করার ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি ভোটের দিন যদি বৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে আমরা ছাতার ব্যবস্থা করেছি। এই ছাতাগুলো আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের উপহার দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, ১৬ জুলাই, ২০২৩
ইএসএস/এনবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।