ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে সরকার: জিএম কাদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে সরকার: জিএম কাদের বক্তব্য দিচ্ছেন জিএম কাদের

লক্ষ্মীপুর: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছে। তারা জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করেছে, জনগণ সেই অধিকার চায়।

কিন্তু সরকার অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে লক্ষ্মীপুরে লক্ষ্মীপুর টাউন হল মিলনায়তনে জেলা জাপার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি।  

জিএম কাদের বলেন, জনগণ এখন আর আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে চায় না। তারা জাপার কথা বলে। জাতীয় পার্টি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সরকার যদি জনগণের জন্য কিছু করে থাকে, তাহলে জনগণই সরকারকে মূল্যায়ন করবে।  

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে আপনাদের ভয় কীসের? -প্রশ্ন জিম কাদেরের।  

তিনি আরও বলেন, এ সরকার জবাবদিহিতার কোনো বালাই করে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো দলীয়করণ করতে গিয়ে স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। ফলে এ সরকার একনায়ক সরকারে পরিণত হয়েছে।  

দেশের মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ একা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়নি জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, হতে পারে সেইসময় বড় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছিল। কিন্তু এই দল ছাড়াও আরও অনেক দল মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে ভূমিকা রেখেছে। অথচ এখন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীকার আন্দোলনের একমাত্র দাবিদার বনে গেছে তারা। তাই এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না বলে মনে করে তারা। এজন্যই তারা আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে মানুষ মনে করে না। এদেশের কৃষক শ্রমিক যুদ্ধ করেছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ছিল না। তাই মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র দাবিদার আওয়ামী লীগ হতে পারে না।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এদেশের মানুষকে বিভাজন করেছে আওয়ামী লীগ। তারা বিভিন্ন নামে এক শ্রেণির মানুষকে সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এদের দিয়ে ভোট ডাকাতি করিয়েছে, অর্থ লুট করিয়েছে, গণমাধ্যম ও মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করিয়েছে। সাধারণ মানুষের এখন ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা নাই, মুক্ত মত প্রকাশেরও স্বাধীনতা নাই।

জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘আগামী নির্বাচন নাকি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আর বিপক্ষ শক্তির মধ্যে হবে। ’ -আমি মনে করি তিনি এটি ভুল বলেছেন। আগামী নির্বাচন হবে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপক্ষে। এদেশের মানুষ ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বৈষম্যমুক্ত দেশ ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আপামর মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু এদেশ থেকে এখনও বৈষম্য দূর হয় নাই।  

তিনি বলেন, এ সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট করেছে। দেশে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। চরম অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করলেও মানুষ তা প্রকাশ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিজেদের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে মত প্রকাশ করলেও তাদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন নেমে আসে।  

জাপা ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, একমাত্র জাপা সাধারণ মানুষের কথা শুনতে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। মানুষ তাদের ইচ্ছে মতো কথা বলতে পারছে জাপার কাছে। তাই আগামী নির্বাচনে জাপা ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে। জনগণের অধিকাংশ রায় নিয়ে জাপার নেতৃত্বে জনগণের সরকার গঠন করবে।

সম্মেলনে জেলা জাপার আহ্বায়ক মোহাম্মদ উল্যাহর সভাপতিত্বে ও জেলা জাপার সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।  

বক্তব্যে চুন্নু বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ে তামাশায় মেতেছে। একদল বলছে রাজপথ দখল নেবে, আরেক দল বলছে রাজপথ মুক্ত করবে। অথচ দেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। আজ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশের রিজার্ভ ফান্ড আশাতীতভাবে কমে গেছে। মানুষের ভোটাধিকার নেই, নাগরিক অধিকার নেই। এ পরিস্থিতিতে শুধু জাপা চিন্তা করছে, মানুষের জীবনমান আর মানুষের মুক্তির পথ নিয়ে।

সব রাজনৈতিক দল নিয়ে সংলাপে বসে এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সোলায়মান আলম শেঠ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি প্রমুখ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।  

এরপর দ্বিতীয় অধিবেশনে লক্ষ্মীপুর জেলার নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক জনের নাম প্রস্তাব সমর্থন আসে। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা কমিটির নতুন নেতা গঠনের বিষয়ে ঢাকায় ফিরে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা জাপার সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এরপর প্রায় ৮ বছর পরে এদিন সংগঠনের ওই ইউনিটের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।