লক্ষ্মীপুর: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন শরিক দলের এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তবে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) তার নির্বাচনী এলাকা। ওই আসনে ধানের শীষে জয়ী সাবেক সংসদ সদস্যও তিনি। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপিসহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য।
এ লক্ষ্যে তিনি কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় দলীয় প্রয়াত নেতাকর্মীদের কবর জিয়ারত, সভা-সমাবেশসহ স্থানীয়ভাবে গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। তিনি তার পক্ষে অনুসারীদের গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়মিত ভোটের ক্যাম্পেইন করার জন্য নির্দেশনাও দিচ্ছেন।
কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই নির্বাচন বিষয়ে গণসংযোগের বিষয়ে এ বিএনপি নেতার ভাষ্য, দীর্ঘ সময় নির্বাচনের বাইরে থাকায় এখন থেকেই গণমানুষের কাছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বার্তা না পৌঁছালে মানুষ তার পক্ষে ভোটমুখী হবে না।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রামগতি উপজেলার রামদয়াল এলাকায় নিজ বাসভবনে দীর্ঘ বক্তব্যে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতিবিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা আশরাফ উদ্দিন নিজান। ওই সময় তিনি বিএনপির শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের তীর্যক সমালোচনা করেও বক্তব্য দেন।
তার এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঝে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
ভাইরাল ভিডিওতে এ বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি যেমন থাকবে, ভোটের প্রস্তুতিও তেমন থাকবে। কারণ হঠাৎ করে ভোট করা যায় না। আপনারা মনে করেন মানুষ ভোট দিয়ে দেবে? না। ভোটের একটা কারিশমা আছে। আমি তো একজন ক্যান্ডিডেট, গত ৮ বছর কেন্দ্রেই যেতে পারিনি। সভা-সমাবেশ গণসংযোগ করতে পারিনি ৩-৪ বছর। অতএব যেমনিভাবে আন্দোলনে সক্রিয় আছি, তদ্রূপ আমরা আরও বেশি করে ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকব। যেন শেখ হাসিনার পতন হলেই বা শেখ হাসিনা রিজাইন করলে আমরা কাউকে না বলে ভোটে নেমে যেতে পারি। কারণ, এখানে (লক্ষ্মীপুর-৪ আসন) আমিই বিএনপির একমাত্র প্রার্থী। এখানে আর কোনো ক্যান্ডিডেট নাই।
তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকি, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আ.স.ম রব, মাহামুদুর রহমান মান্না তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। ১৯৮৬ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি। কিন্তু আ.স.ম রব ভোট করেছেন। ১৯৮৮ সালে এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দল হয়েছে আ.স.ম আব্দুর রব। ১৯৯৬ সালে বিএনপি এক সিটের জন্য সরকার গঠন করতে পারেনি। তিনি (রব) আবার শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ওই সিট দিয়ে দিলেন। অতএব এ ধরনের লোকদের আমরা গ্রহণ করা তো দূরের কথা, আশপাশেও জায়গা দেব না। ওর তো জামানতই বাতিল হয়ে গেছে।
আ.স.ম রবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি শুনে রাখেন, আমি ইলেকশনে দাঁড়িয়ে গেছি, ইনশাআল্লাহ। আমি শ্রমিক সমাবেশ থেকে বলে দিলাম ইলেকশনে আমি দাঁড়িয়ে গেছি। কোনো হাংকি-পাংকি রামগতি-কমলনগরে হবে না। এই বক্তব্যে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বাস জানান তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও সরকারকে হটিয়ে নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি। এজন্য আন্দোলনের পাশাপাশি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য আহ্বান জানাই।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন - রামগতি পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা শাহেদ আলী পটু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিএনপির সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দীন নিজানের এমন বক্তব্য নিয়ে জেলাজুড়ে এখন তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকের মতে, তার এমন বক্তব্য ও নির্বাচনী প্রস্তুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, আমি তার এ বক্তব্য শুনি নাই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি (আশরাফ উদ্দিন নিজান) এসব কথা বলতেই পারেন।
তবে তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, ভোটের দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকতেই পারে। কিন্তু পূর্ব শর্ত হলো আগে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে। ভোটের প্রস্তুতি আমাদের সবসময় আছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকের অভাব নেই। তিন দিন আগেও আমরা ভোটের জন্য প্রস্তুত।
এদিকে ভাইরাল ভিডিওর বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিএনপি নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান।
তিনি বলেন, শরিক দলের অন্যান্য যেসব নেতাদের বিষয়ে বলেছি, তারা যেকোনো সময় বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সটকে পড়তে পারে। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক বার্তা দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
এসএএইচ