ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে: মান্না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩
দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে: মান্না

ঢাকা: দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।

এই দেশ আমার দেশ নয়। যে দেশকে মা-বোনের রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিলাম, তা এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। আমরা সেই দেশ চাই, যেখানে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, বিনা খাদ্যে মারা যাবে না। শেখ হাসিনা দেশটাকে নিজের ইচ্ছেমতো শাসন করছেন। তাদের থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য আমরা লড়াই করছি।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ‘আদিলুর-এলানের সাজা, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।  

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।

সেমিনারে মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। অথচ সরকার তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। ২০১৫ সালে আমার বিরুদ্ধে দুটো মামলা করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহ, সেনা বিদ্রোহে উসকানিসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগে। আট বছর পার হওয়ার পরও সরকার সেই মামলায় চার্জশিট দিতে পারেনি। অথচ মামলা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাকে প্রথমে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুইদিন গুম করে রাখার পর গ্রেপ্তার দেখায় এবং সেই মামলায় ২২ মাস কারাগারে রাখে। এখনও প্রতিনিয়ত আমাকে সেই মামলাগুলোতে হাজিরা দিতে হয়। অভিযোগপত্র ছাড়াই কাউকে কারাগারে রাখা চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন। এমনকি সরকার আমার পাসপোর্ট আটকে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, বেগম জিয়ার মতো আমারও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন। পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার জন্য আমি আবেদন করেছি কয়েক দফায়। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদনের ওপর শুনানি পর্যন্ত হয়নি। এভাবেই ক্ষমতাসীন সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার হরণ করে একদলীয় শাসনপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, প্রতিটি দেশেরই ভালো খারাপ দুইটি দিক থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের শুরু থেকে বলা আছে, বাক-স্বাধীনতা খর্ব করে এমন কোনো আইন কংগ্রেস পাস করতে পারবে না। যা আমাদের দেশে চিন্তাও করা যায় না। আমাদের মতো গণতন্ত্রহীন দেশে কটাক্ষ, মানহানি, অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার আইন আছে।  একটি দেশে গণতন্ত্র আছে কি না সেটা এসব আইন দেখে বোঝা যায়। আমাতের রাষ্ট্রটি কিছু লোকের লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এই বাংলাদেশ আমি চাই না।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আদিলুর-এলান এই সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ আইন সরকারের সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে, নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য নয়। সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিদিন যেসব বিদ্বেষমূলক, প্রতিহিংসা পরায়ণ, বিরোধী মত দমনের বক্তব্য দেন, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হওয়া উচিত। সরকার এখন আর রাজপথে মোকাবিলা করতে পারে না। তারা বিরোধী মতকে দমন করার জন্য বিচার বিভাগকে হাতিয়ার বানিয়েছে। বিচার বিভাগসহ সবকিছুকে এই সরকার দলীয়করণ করেছে। তাই এই সরকারকে পরিবর্তন করতে হবে।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আজকে দেশের এমন অবস্থা, সরকার মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য, মানবাধিকারকর্মীরা যাতে আওয়াজ তুলতে না পারে, সেজন্য আদিলুর-এলানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই সরকার কী বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, শাপলা চত্বর ট্র্যাজেডিতে কেউ মারা যায়নি, কোনো হত্যাকাণ্ড হয়নি। বিচার বিভাগ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ সরকার আগের দিন রাতে যা বলে, পরদিন বিচার বিভাগ সেটাই করে। আপনারা প্রস্তুত হোন, সোচ্চার হোন, এই সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে সরাতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু নিজের সুবিধা হাসিল করতে চায়। যারা আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এনেছিল, তারাই আবার ক্ষমতায় গিয়ে সেটাকে সম্পূর্ণ গিলে খেয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। তারা আসলে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র গড়তে চায়। আইনের শাসনের নামে এই ফ্যাসিবাদকে ভেঙে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের জমিদারি সম্পত্তি নয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, আদিলুর-এলান দেশের গুম, খুনের মতো বিষয় তুলে ধরে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন। আর তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাজা দেওয়া হলো। এই আইনে এই সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। তারা মিথ্যাচার করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইনে রাজনীতিকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের যে স্লোগান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার বিরুদ্ধে কথা বললে, প্রশ্ন তুললে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লুটপাট, গুম-খুন, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেতনা। এই চেতানা বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললে আপনি অপরাধী হবেন। আপনার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে, সাজা হবে। আর আপনি অপরাধী কি না সেটি ঠিক করছে একজন এসআই। এই আইনের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩
এসসি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।