ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যা: কাউন্সিলর নিপুসহ ১০ জনের নামে মামলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যা: কাউন্সিলর নিপুসহ ১০ জনের নামে মামলা

সিলেট: অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সিলেটে ছাত্রলীগ কর্মী আরিফ মিয়াকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপুসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বুধবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিহতের মা আঁখি বেগম বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, খুনের ঘটনার পর পরই আটক দুজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু পলাতক রয়েছেন।  

তবে গ্রেপ্তারের স্বার্থে মামলার অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে নগরের বালুচর টিবিগেট এলাকায় বাসার সামনে আরিফ মিয়াকে (১৯) কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় ছাত্রলীগের নিপু গ্রুপের ক্যাডাররা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহত আরিফ মিয়া টিভি গেট এলাকার ফটিক মিয়ার ছেলে।

আরিফ আহমদকে কোপানোর সময় দৌড়ে সেখানে গিয়েছিলেন মা আঁখি বেগম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পরপরই আমি সেখানে গিয়ে দেখেছি, সাদা পাঞ্জাবি পরে হিরণ মাহমুদ নিপু মোটরসাইকেলে উঠে চলে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় ছেলেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা হন। যাওয়ার পথে ছেলে তাকে বলেছেন, হিরণ মাহমুদ, রনি, মামুন, হেলালসহ ১৫-২০ জন মিলে তার ওপর হামলা চালিয়েছেন।

নিহত আরিফ মিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। নাজমুলও এ হত্যাকাণ্ডে হিরণ মাহমুদ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন।

ঘটনার পর থেকে হিরণ মাহমুদ নিপুর মোবাইলে ফোনে কয়েক দফা কল করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরিফ আহমেদের বাবা ফটিক মিয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। কদিন ধরে অসুস্থ থাকায় বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। ফটিক মিয়া ও আঁখি বেগমের পরিবারে চার ছেলে। তাদের মধ্যে সবার বড় আরিফ আহমেদ, তিনি টিলাগড় এলাকার স্টেট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন।

আঁখি বেগম বালুচর এলাকার রাজা মিয়ার কলোনিতে অন্যের রান্নার কাজ করে সংসার চালান।

ছেলেকে রাজনীতি করতে নিষেধ করেছিলেন উল্লেখ করে আঁখি বেগম বলেন, ছেলে এক বছর আগে কলেজে ওঠার পর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করত। তিনি বলেছিলেন রাজনীতি না করতে। জবাবে ছেলে বলেছে, কলেজে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করতে হয়। তা না হলে তাকে মেরে শেষ করে দেবে। এরপর তিনি জানিয়েছিলেন, এইচএসসি পাস করার পর তাকে আর কলেজে রাখবেন না।

আরিফের ওপর কয়েকদিন আগেও হামলা হয়েছে। সে ঘটনা উল্লেখ করে আঁখি বেগম আরও বলেন, আরিফের বন্ধুর সঙ্গে অন্যদের পূর্ববিরোধ ছিল। বন্ধুকে না পেয়ে আরিফের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় আরিফের বাঁ হাতের আঙুল কেটে গিয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর এ ঘটনায় গত সোমবার তিনি এসএমপির শাহপরান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।

এসএমপির শাহপরান (র.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ৪/৫ দিন আগে আরিফকে মারধরের ঘটনায় তার মা আঁখি বেগমের দায়েরকৃত অভিযোগটি সোমবার রাতেই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় ৭ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, আরিফ হত্যার ঘটনায় আটক রনি ও মামুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদের সক্রিয় ক্যাডার। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এলাকায় তারা বখাটে হিসেবে পরিচিত। পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই  তারা আরিফ আহমেদকে খুন করেছে। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের ১৬-১৭টি কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।