বরিশাল: বরিশাল জেলার ছয় আসনের পাঁচটিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এরইমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে। অনেক আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের চেয়েও বেশি আলোচনায় দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের পদে থাকা নেতাকর্মী যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তারা ডামি প্রার্থী। তবে ডামি হোন বা স্বতন্ত্রই হোন, ওই প্রার্থীরা এ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অটল থাকার মনোভাব প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
বরিশালের ছয় আসনের মধ্যে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে শুধু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ একাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ আসনে বাকি তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন জাতীয় পার্টির, একজন জাকের পার্টির, আর বাকিজন এনপিপির প্রার্থী।
দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক অভিভাবক খ্যাতি পাওয়া এ প্রার্থীর আসনে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী কিংবা দলের স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী নেই। এমনকি আওয়ামী লীগের হয়ে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে আর কেউ মনোনয়নও প্রত্যাশা করেননি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় প্রধানের ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অবস্থান এ অঞ্চলে এমন যে, তাকে সবাই সম্মান করেন। তিনিও সবাইকে ভালোবাসেন এবং গোটা জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আগলে রাখেন। তাই তাকে সবার ঊর্ধ্বে রাখেন সবাই।
তবে এমন চিত্রের দেখা মেলেনি এ জেলার বাকি ৫ আসনে। বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আস্থাভাজন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।
এ আসনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইকবাল হোসেন তাপস, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী সংগীতশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস।
আর দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত ও আওয়ামী লীগেরই সাবেক সংসদ সদস্য (নবম জাতীয় সংসদ) মো. মনিরুল ইসলাম এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ও বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ কে ফাইয়াজুল হকও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
একইভাবে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে নৌকার প্রার্থী সরদার মো. খালেদ হোসেনের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত মুলাদীর ড. মোহাম্মদ আমিনুর হক ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আতিকুর রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এ ছাড়া বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য পঙ্কজ নাথও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ জাহিদ ফারুকের পাশাপাশি মনোনয়ন বঞ্চিত বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও মো. সালাহ উদ্দিন রিপন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এর মধ্যে সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমার সময় উপস্থিত ছিলেন একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন-বীর বিক্রম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, সদস্য এস এম জাকির হোসেন।
অনেকেই বলছেন, মনোনয়নবঞ্চিতদের এ অবস্থানের কারণেই স্পষ্ট হয়েছে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি।
এদিকে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুল হাফিজ মল্লিকের পাশাপাশি মনোনয়নবঞ্চিত বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রাজিব আহম্মেদ তালুকদার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের প্রশাসক খান আলতাফ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
স্বতন্ত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনার সৃষ্টি করেছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, সদ্য অব্যাহতি দেওয়া বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শামসুল আলম।
তাদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিলেও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নেত্রীর নির্দেশে নৌকার প্রার্থীর বাইরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। যদিও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণেই নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠ যেমন মসৃণ হচ্ছে না, তেমনি শেষ পর্যন্ত মাঠে সবাই থাকলে লড়াইটা আওয়ামী লীগের মধ্যেই বেশি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৩
এমএস/আরএইচ