ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আমি-ডামির নির্বাচন আখ্যায়িত করে জনগণকে এই নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) চিকিৎসকদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার বন্ধ, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি ও ডামি নির্বাচন বর্জনের দাবিতে এবং অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত গণসংযোগপূর্ব মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মানববন্ধনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জানুয়ারির ৭ তারিখে যা ঘটতে যাচ্ছে, এটা যদি নির্বাচন হতো, তাহলে সেই নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্ন আসতো। নির্বাচন মানে হলো প্রতিদ্বন্দিতা, প্রতিযোগিতা। আর সেটা হয় পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে, প্রতিপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু আগামী ৭ তারিখে যেটা ঘটতে যাচ্ছে, সেখানে কোনো প্রতিপক্ষ নেই। সেখানে প্রার্থী হয় ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী, না হয় তাদেরই অনুমোদিত ডামি প্রার্থী, আর না হয় এমন কিছু রাজনৈতিক দলের প্রার্থী যারা নির্বাচনের আগেই সরকারি দলের যিনি প্রধান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। অর্থাৎ, আমি, ডামি এবং আমার লোক। এদের মধ্যে যে নির্বাচনী খেলা, এটাকে আর যাই হোক নির্বাচন বলা যায় না। এই কারণে এটাকে আমরা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, যারা নির্বাচন করছে এর মধ্যে একটি দল দেখাতে পারবেন যারা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল? সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তাহলে আপনি (জনগণ) কাকে ভোট দিতে যাবেন? আপনি যাকেই ভোট দেন, সে হয় সরকারি দলের প্রার্থী, না হয় ডামি প্রার্থী, আর না হয় সরকারি দলের অনুগত দলের কোনো প্রার্থী। এই রসিকতার কোনো অর্থ হয় না।
দেশবাসীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে যে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছিল, বাকশালের নামে একটি মাত্র দল গঠন করা হয়েছিল, সেই দলের অধীনের নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল এমন। সে সময় নিয়ম ছিল, যেহেতু আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই, সেহেতু বাকশালের পক্ষ থেকেই একাধিক প্রার্থীকে অনুমতি দেওয়া হবে। তারা নির্বাচন করবে। তার মধ্যে যে বেশি ভোট পাবে সেই জিতবে। সেটা সে সময় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবায়ন করা হলো। এখনো ওই ঘটনাই। তারাই কিছু প্রার্থী ঠিক করে দিচ্ছে। এর মধ্যেই যে বেশি ভোট পাবে, সে জিতবে। বেশি মানে কত? নির্বাচন কমিশনার একজন বলেছেন, যদি শতকরা ১ ভাগ লোকও ভোট দেয়, তার মধ্যে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনিই বিজয়ী হবেন। এটি আর যাই হোক গণতান্ত্রিক অবস্থা না।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের নামে এমন কিছু দেখার জন্য এদেশের লাখো মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেয়নি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছিলাম। আমরা এমন একটি দেশের জন্য লড়াই করেছিলাম, যেখানে আমরা যাকে নির্বাচিত করব, জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে, তারা দেশ পরিচালনা করবে। কিন্তু ২০১৪-২০১৮ সালে আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আরেকবার আমাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চলছে। সেজন্য আমরা জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছি, নির্বাচনের নামে পাতানো খেলা, আমি-ডামির নির্বাচন প্রতিহত করুন, বর্জন করুন।
জনগণের উদ্দেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা শুধু বলেছি, আপনারা দয়া করে ভোট দিতে যাবেন না। কারণ, আপনার ভোটে কোনো কিছুর কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। এই অন্যায়ে আপনারা সহযোগিতা করবেন না। সরকার নিজে নিজে যেভাবে চেষ্টা করছে করুক, কিন্তু আপনারা এর সাথি হবেন না। আপনি যদি ডাকাতি ঠেকাতে না পারেন, অন্তত ডাকাতদের সঙ্গে যুক্ত হবেন না। ডাকাতিতে সহযোগিতা করবেন না। এটাই আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ।
তিনি আরও বলেন, প্রায় এক লাখ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুট হয়ে গেছে। কারা এই টাকা লুট করেছে? সরকার কি জানে না? সরকার কি তাদের ধরতে পারে না? কিন্তু ধরে না কারণ, তারা হয় সরকারি দলের, আর না হয় সরকারি দলের পক্ষের লোক। এর ফলে বাংলাদেশ আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম লাবু, মহাসচিব ড. আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এরফানুল হক সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, কোষাধ্যক্ষ ডা,. জহিরুল ইসলাম শাকিল, যুগ্ম মহাসচিব পারভেজ রেজা কাকন, যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফরহাদ, যুগ্ম মহাসচিব মনোয়ারুল কাদের বিটু প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে ড্যাবের নেতাকর্মীরা ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ