টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ): আগামীতে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে ধরে এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (ডিসেম্বর ৩০) টুঙ্গিপাড়ার সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ যদি দিন দেয় আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে- ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষ মারবে সেটা হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে; ধরে এনে শাস্তি দেব।
তিনি বলেন, তারেক জিয়া হুকুম দিচ্ছে- রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা হচ্ছে। সাংবাদিক, পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে। পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা বাংলাদেশে এ সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না।
নির্বাচন বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার অনেক ষড়যন্ত্র এবং এই ষড়যন্ত্রের সাথে আন্তর্জাতিকভাবেও অনেকে জড়িত। আমাদের দেশে নির্বাচন হবে না, এখানে তারা তৃতীয় পক্ষ আনবে।
তিনি বলেন, তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ২০০৭-এ আপনারা দেখেছেন কী করেছে। তার আগে তো জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া, এরাই তো ছিল; মানুষের তো কোনো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি! মানুষ তো যে অন্ধকার-অন্ধকারেই ছিল!
৭ জানুয়ারি নির্বাচন বানচালের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা এটাই চাই এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হতে হবে। আগামী নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য যে চক্রান্ত চলছে, সে চক্রান্তের সমুচিত জবাব ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা দেব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ চায় দেশে শান্তি থাকুক মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক। দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হোক। আর তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিন্তু এটা করেও তারা সফল হতে পারছে না।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যাত্রা সফল করতে পারে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ সে যোগ্যতাই নাই বিএনপি-জামায়াতের। কারণ বিএনপি হচ্ছে খুনিদের পার্টি আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর পার্টি।
বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো বিদেশে কয়েকজন রয়ে গেছে। মেজর নূর, কর্নেল রশিদ, মেজর ডালিম, মসলেহ উদ্দিন, রাশেদ এখনো ফেরারি। তাদের আনার জন্য বিদেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি, আইনগতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি জানি না কেন আমেরিকা সেই খুনি রাশেদকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কানাডা নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। ডালিম আর রশিদ পাকিস্তান আর লিবিয়াতে যাতায়াত করে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে ওই খুনিদের ধরে এনে আমরা রায় কার্যকর করব। জাতির পিতার হত্যাকারীদের রায় আমরা কার্যকর করব। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আমরা নিয়ে এসেছি। ওদের রায় আমরা কার্যকর করেছি।
বেলা সোয়া ১১ টায় টুঙ্গিপাড়ার সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে আসেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
এদিকে শেখ হাসিনার নিজের নির্বাচনী এলাকার (টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়া) এ জনসভায় যোগ দিতে শনিবার (ডিসেম্বর ৩০) ভোর থেকে এ মাঠে জড়ো হন এখানকার মানুষ।
ঢাক-ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে-গেয়ে উৎসব করতে করতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থকরা। বেলা ১০টা নাগাদ পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়।
নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের রঙিন পোশাক, হাতে লাল-সবুজ পতাকায় বর্ণিল সাজে সেজেছে শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠ ও আশপাশের এলাকা।
নিজের পিতৃভূমিতে বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনে গোটা গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ায় উৎসবের আমেজ।
সমাবেশস্থল নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। আশপাশের এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার জনসভা শেষে কোটালিপাড়ায় যান শেখ হাসিনা। সেখানে একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগদান শেষে মাদারীপুরে আরেকটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেবেন তিনি। পরে সেখান থেকে ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।
এর আগে দুই দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সড়ক পথে বরিশাল যান শেখ হাসিনা। বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় যোগদান শেষে সন্ধ্যায় নিজের পিতৃভূমিতে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী এ সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
শুক্রবার (ডিসেম্বর ৩০) সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
গত ২০ ডিসেম্বর ২০ সিলেটে হজরত শাহজালাল ও হজরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারত এবং এরপর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রেড ক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, অভিনেতা মীর সাব্বির, অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের। সঞ্চালনা করেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
এমইউএম/এসএএইচ
আরও পড়ুন>> কানায় কানায় পূর্ণ টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠ
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
এমইউএম/এসএএইচ