ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জাতীয় পার্টিরই বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
জাতীয় পার্টিরই বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কোন মোর্চা বা কোন দল হচ্ছে সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সার্বিক পরিস্থিতি থেকে গত দুটি সংসদে বিরোধী দলের দায়িত্বে জাতীয় পাটির (জাপা) সম্ভাবনাই বেশি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মাত্র ১১টি আসনে বিজয়ী হওয়ায় সংসদে তাদের বিরোধী দল হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। আসনসংখ্যা এতো কম হওয়ায় জাতীয় পার্টির পরিবর্তে স্বতন্ত্রদের বিরোধী দলে দায়িত্বে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী হয়।  

এই অবস্থায় জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি সংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা মোর্চা বা জোট তৈরি করে স্পিকারের কাছে আবেদন করলে ওই মোর্চাই হতে পারে এ সংসদের বিরোধী দল।  

কিন্তু এখন পর্যন্ত সে  ধরনের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।

আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র এমপিদের সূত্র গুলো থেকে জানা যায়, বিরোধী দলের অবস্থানের যাওয়ার মতো ইচ্ছা অধিকাংশ স্বতন্ত্র সদস্যদের নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হলেও এই স্বতন্ত্র এমপিদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্ব নেতা। এছাড়া বাকিদের অনেকেই কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগের সংস্পর্শে আছে। এই অবস্থায় তারা নিজেদের উদ্যোগে বিরোধী দলে যেতে চায় না। কারণ সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও দলের পদধারী, তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, দলের পদ রক্ষা  বা অবস্থান ঠিক রাখার বিষয়গুলো রয়েছে। তাছাড়া পরবর্তীতে দলের পদ না থাকলে নেতাকর্মীরা তাদের থেকে দূরে সরে যাবে। এই ধরনের অনিশ্চিত অবস্থায় তারা বিরোধী দলে যাওয়ার মতো ঝুঁকি নিতে চায় না। তবে এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো মতামত বা সিদ্ধান্ত নিলে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন।

তবে স্বতন্ত্র সদস্যদের বিরোধী দলের দায়িত্বে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরও কিছু চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। কারণ স্বতন্ত্র সদস্যদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে ও দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এই অবস্থায় তারা মোর্চা করে বিরোধী দলে গেলে আপাত দৃষ্টিতে বিরোধী দল হলেও প্রকৃত বিরোধী দলের মতো অবস্থানে যেতে পারবে না বা যাবে না তারা। আর এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনাও আসবে। এ বিষয়গুলোও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় রয়েছে।  

তাছাড়া শপথ নেওয়ার পর গত ১৩ জানুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন উল্লেখ করে জাতীয় পার্টিকেই সংসদে বিরোধী হওয়ার কথা বলেছেন। ফলে জাতীয় পার্টিই দশম ও একাদশ সংসদের মতো দ্বাদশ সংসদেও বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এদিকে জাতীয় পার্টিও বিরোধী দলের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে দলীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। ইতোমধ্যে দলটি বিরোধী দলের নেতা হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নির্বাচন করেছে। পাশাপাশি বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং বিরোধী দলে চিফ হুইপ হিসেবে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে নির্বাচিত করেছেন।  

তবে তার পরও বিষয়টি চূড়ান্ত নয়, কারণ সব কিছুই আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ যদি মনে করে স্বতন্ত্রদেরকে বিরোধী দলের দায়িত্বে আনবে তাহলে সেটাই চূড়ান্ত হবে।  

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি গত শনিবার রংপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিরোধী হচ্ছি কি না এখন পর্যন্ত সিগন্যাল পাইনি।  

এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। এই দিনই বিরোধী দলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
এসকে/এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।