ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

এক কমিটিতেই ময়মনসিংহ ছাত্রদলের ছয় বছর  

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
এক কমিটিতেই ময়মনসিংহ ছাত্রদলের ছয় বছর  

ময়মনসিংহ: ২০১৮ সালের ১২ জুলাই ময়মনসিংহ ছাত্রদলের তিনটি ইউনিটের (দক্ষিণ, উত্তর জেলা ও মহানগর) আংশিক কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিতেই পৌনে ছয় বছর ধরে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম।

 

কিন্তু দীর্ঘ সময়েও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কমিটি নিয়ে সংগঠনের অভিভাবকদের নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। এতে ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কার্যক্রম অনকটাই স্থবির হয়ে গেছে।  

এনিয়ে বর্তমান কমিটিতে পদবঞ্চিত, নির্যাতিত ও অবমূল্যায়িত হওয়া নেতাকর্মী এবং নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এমন দাবি রাজপথে সক্রিয় ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর।  

অভিযোগ উঠেছে, সংগঠনটির এ দুর্বল অবস্থার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গাফিলতি। সেই সঙ্গে জেলার শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় কেন্দ্রে আর্থিক সুবিধা দিয়ে ছাত্রদল ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের নেতৃত্ব নিজেদের পক্ষে রাখতে নিয়মিত কমিটি করেন না। ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  

সংগঠন সূত্র জানায়, প্রায় পৌনে ছয় বছর আগে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ৮৩ সদস্য বিশিষ্ট, উত্তর জেলা ছাত্রদলের ৫৩ এবং মহানগর ছাত্রদলের ৫৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি করা হয়। এরপর ২০২১ সালে ব্যাপক আয়োজনে কর্মীসভা করে এ তিন সংগঠনের অধীন সব ইউনিট কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অল্প সংখ্যক ইউনিট কমিটি বাদে বাকি সব কমিটি গঠিত হয়।        

তবে এসব কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। ফলে দায়িত্বশীল নেতাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিগত পৌনে ছয় বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি দক্ষিণ ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের কমিটি। তবে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩৯৬ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু মহানগরের অধীন রাজনীতির ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আনন্দমোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠন হয়নি দীর্ঘ সময়েও।  

একই অবস্থা ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত দুটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)। ২০২১ সালের ১৬ জুন এ দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক কমিটি গঠিত হলেও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বৈরী মনোভাবের কারণে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না ছাত্রদল। এ অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কমিটির নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের আশপাশের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বা অন্যান্য কর্মসূচি পালন করে আসছেন।    

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখার আহ্বায়ক মো. ইমরান হোসেন প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে গিয়ে দফা দফায় হামলার শিকার হয়েছেন নেতাকর্মীরা। তারপরও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কগুলোতে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছি। সেই সঙ্গে মামলা, গ্রেপ্তার আর আদালতে নিয়মিত হাজিরা তো আছেই।     

সংগঠন সূত্রটি জানায়, ময়মনসিংহ ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্বে যারা আছেন, তাদের প্রায় সবাই যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্ব পেতে লবিংয়ে ব্যস্ত। এ কারণে ইউনিট কমিটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের অনেক শীর্ষ নেতা বিগত আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না। এসব কারণে ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কাজে স্থবিরতা এবং দুর্বল অবস্থা দৃশ্যমান। সেই সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী কর্মসূচিতে এর প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। এ অবস্থায় নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও সাংগঠনিক কাজে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করছেন সংগঠনের অনেকেই।   

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান মহানগর সভাপতি নাইমুল করিম লুইন জানান, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা নতুন কমিটি না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দুই বছর পর পর নতুন কমিটি হলে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ছাত্রদলের পাশাপাশি যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সংগঠনের কমিটি নিয়মিত করা হলে সংগঠনের কাজে গতিশীলতা বাড়বে বলে আমি মনে করি।  

বর্তমান জেলা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে থাকা সাবেক ছাত্রনেতারা বলেন, রাজনীতিতে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। আন্দোলন সংগ্রামে হতাশা এবং সম্ভাবনা সব সময়ই সমান। যে কোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে। এক্ষেত্রে দলের অঙ্গ সংগঠনে গতিশীলতা বজায় রাখতে নতুন নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। আশা করছি, দলের স্বার্থে অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।  

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এসব বিষয় নিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। দ্রুত  সংগঠনের ইউনিটগুলোর কার্যক্রমে গতি আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের নানা দিক বিবেচনা করেই ছাত্রদলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশের অনেক ইউনিট কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।