ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার আহ্বান ড. কামালের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার আহ্বান ড. কামালের

ঢাকা: দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের ডাক দিতে এবং মাঠে নামার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা বলেন, দেশ ও জাতি যে কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছে সেখান থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। তাই চলমান সংকট থেকে উত্তরণে সবাইকে একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।

নিজের ৮৭তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে গণফোরাম আয়োজিত এক উৎসবে শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে এ আহ্বান জানান ড. কামাল।

ড. কামাল বলেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আমরা এখানে পাচ্ছি। আমার আন্তরিক আবেদন, আসুন আজকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এই কঠিন অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমার বিশ্বাস, ইতিহাস থেকে যেমন শিক্ষা আমরা পাচ্ছি, যখনই আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছি তখন যত কঠিন চ্যালেঞ্জই হোক আমরা সেটা অতিক্রম করতে পেরেছি। আসুন আমরা আজকে এই সিদ্ধান্ত নিই, আমরা সকলে মিলে একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিই।

অনুষ্ঠানে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় ড. কামাল হোসেনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা করেন বাসদের উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মান্না, জাসদের সভাপতি নুরুল আম্বিয়া, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য আব্দুল লতিফ মাসুম, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ এখন অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন অন্ধকারের মধ্যে আছি। এই গভীর অন্ধকার রাত প্রায় শেষের দিকে। রাত যত গভীর হয় সকাল ততো কাছে আসে। আগামী দিনে একটি নিকটবর্তী সময়ে আসতে পারে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডা. কামাল হোসেন এখন পর্যন্ত সবার কাছে প্রাসঙ্গিক। তার দিকে আঙুল তুলতে পারে এমন কেউ এই দেশে নেই। কেউ বলতে পারবে না তিনি চুরি করেছেন, সন্ত্রাসী কাজ করেছেন। আমি চাই তিনি আরও অনেক সময় বাঁচুক। মানুষের সামনে আশার বাতি জ্বালানোর কাজ ড. কামাল এখনো করতে পারেন। এখনো তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করতে পারেন। ড. কামাল হোসেন শুধু গণফোরামের সভাপতি না, তিনি সারা দেশের মানুষের সভাপতি। সারা দেশের সবাইকে একত্র করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার যে ইমেজ প্রয়োজন সে ইমেজ কামাল হোসেনের আছে।

জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ড. কামাল হোসেন আমাদের দেশের বাতিঘর হয়ে সারা জীবন সমুজ্জ্বল থাকবেন এবং আমাদের দিশা দেখাবেন।

আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ড. কামাল একটি অসাধারণ সংবিধান বাংলাদেশের মানুষকে উপহার দিয়েছিলেন। যেখানে মানবাধিকার, বেসিক রাইটস, ফান্ডামেন্টাল রাইটস নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের আজকে যে অবস্থা, তাতে আমাদের দুঃখ ভারাক্রান্ত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে তার প্রণীত সংবিধান ১৭ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে, সংশোধনী হয়েছে। আজকে যে অবস্থায় তিনি দেশকে দেখে যাচ্ছেন, গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটানো, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা তার প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের শ্রেষ্ঠ পথ।

আবু সাঈদ খান বলেন, কামাল হোসেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংকটে ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। যদিও সেই সংবিধান এখন আর নেই। সেই সংবিধান কাটা ছেঁড়া হয়েছে বহুবার। ড. কামাল হোসেন আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন। আগামীতেও পথ দেখিয়ে তিনি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি তার শতায়ু কামনা করি।

সাইফুল হক বলেন, আমাদের এখনে গুণী মানুষের কদর নেই। এমন একটি সময়ে আমরা বসবাস করছি, যেখানে ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন না। ড. কামাল হোসেন আমাদের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তার মধ্যে একজন কামাল হোসেন। এগুলো ইতিহাসের অংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগ ড. কামাল হোসেনকে ধারণ করতে পারেনি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাগরিক কণ্ঠের প্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন সব সময় আমার পাশে থেকেছেন, আমাকে সাহস যুগিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ। তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ছাত্র রাজনীতি করার সময় তাকে শাসক দলের রাজনীতিবিদ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। তিনি শাসক শ্রেণির মধ্যে থাকলেও জনগণের জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যক্তি। বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থেকেছেন। তার কর্ম বাংলাদেশের মানুষ মনে রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।