ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আন্দোলনকারীরা দেশের সংবিধান মানতে চায় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
আন্দোলনকারীরা দেশের সংবিধান মানতে চায় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা এ আন্দোলন করছে, তারা দেশের সংবিধান মানতে চায় না। দেশের অনগ্রসর গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের কার্যক্রমে যুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সংবিধানে আছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী যখন আন্দোলন শুরু করে, তখন সেখানে বিএনপি-জামায়াত তাদের প্ল্যান্টেড লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। সেই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান এসেছে। কোটা আন্দোলনের নামে যারা রাজাকারের পক্ষে স্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

কোটার বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারভুক্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে কোটাপদ্ধতি বাতিলের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল, একজন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেটি বাতিল করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট আবার সেটির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।  

তিনি বলেন, এটি আদালতে বিচারাধীন বিষয়। এ নিয়ে সরকার কিছু করতে গেলে আদালত অবমাননা হবে, সংবিধানবিরোধী হবে। বুঝেও বিএনপি-জামায়াতের প্ল্যান্টেড যারা, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝাচ্ছে। আবেগ-অনুভূতিকে ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে এমনকি জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কোটা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী স্পষ্ট বলেছেন, বিষয়টি যখন আদালতে বিচারাধীন, তখন এ বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সরকার সেই মোতাবেক কাজ করবে।

হাছান বলেন, এটি বুঝেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান, আন্দোলন- এসব আদালত অবমাননার শামিল, সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেদিমূলে চপেটাঘাত। সুতরাং যারা রাজাকারের পক্ষে শ্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে, আইন-আদালতের মর্যাদা রক্ষার্থে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

পাশাপাশি তিনি জানান, আজ নারী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন নারী কোটা রক্ষার জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা দাঁড়িয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য, চাকমা-মারমাসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীও তাদের কোটার জন্য দাঁড়িয়েছে।

এ সময় আওয়ামী লীগকে দেশ পাহারা দিতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে রাজপথে থেকেছি, জয়লাভ করেছি বলে ঘরে বসে থাকা নয়, এখন দেশ পাহারা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, দেশবিরোধী অপশক্তি যখন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তরুণদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেদিমূলে আঘাত হানার চেষ্টা করছে, তাদের রুখে দিতে রাজপথে থাকতে হবে, দেশ পাহারা দিতে হবে।
 
এর আগে, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতা দখল করার সময় ক্ষমতায় ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তারা বেগম জিয়াকে প্রথমে গ্রেপ্তার করেনি। গ্রেপ্তার করেছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। কারণ অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনে শেখ হাসিনাই একমাত্র প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।

তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার যেহেতু গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরিয়েছিল, তাই গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই প্রথমে গ্রেপ্তার করেছিল এবং তাকে এমন নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছিল যে, জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন এবং তাকে হাসপাতালে বা আদালতে নেওয়ার সময় ছাড়া আমাদের এক নজর দেখার আর সুযোগ ছিল না।

হাছান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের দলের কর্মীরা যেভাবে আন্দোলন করেছিলেন, তাতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও মুক্তি পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার কারাবন্দি সময়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দলকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বড় ভূমিকা রাখেন।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান সম্মানিত অতিথি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক  সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বিশেষ অতিথি এবং ঢাকা ১৯ আসনের এমপি মো. সাইফুল ইসলাম আমন্ত্রিত বক্তার বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
টিআর/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।