ঢাকা: ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়ি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ বাড়িতেই সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার পতন হয়। তিনি পালিয়ে যান প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতার রোষের শিকার হয় ৩২ নম্বরের বাড়িটি। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চলে ভাঙচুর-লুট। সেদিন উত্তেজিত জনতা লুট করে নিয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত আসবাবপত্র। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ নথি-দলিলসহ সবকিছু।
আর মাত্র একদিন পরই ১৫ আগস্ট। আগে প্রতি বছর এদিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বঙ্গবন্ধু ভক্তদের ঢল নামতো। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষ। তবে এ বছরের পরিস্থিতিটা অন্যরকম। হামলা-ভাঙচুরের শিকার হওয়ার পর বাড়িসহ সামনের সড়কটি ‘ভুতুড়ে’ হয়ে পড়ে।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরাই এখন ঐতিহাসিক বাড়িটি সংস্কারে নেমেছেন, যাতে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। বাংলানিউজের এই প্রতিবেদক মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে পরিস্থিতি ও ছাত্রদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সেখানে তিনি দেখতে পান, এক সপ্তাহ আগে যে সড়ক পোড়া জঞ্জাল দিয়ে ভরা ছিল, তা এখন পরিষ্কার। সড়কের দুই পাশেই আগের মতোই ব্যারিকেড রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সড়কের বিভিন্ন দেয়াল ও সিঁড়িতে স্লোগান ও গ্রাফিতি আঁকছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার যে প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়েছিল, সেখানে আবার নতুন করে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি আঁকছেন তারা, যাতে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেয়ালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের নাম লেখা হচ্ছে। আছে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানো নানা স্লোগানও। তবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর বন্ধ থাকায় সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গ্রাফিতি আঁকার কাজে যুক্ত হন কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষোভ নেই। বরং, তারা তাকে শ্রদ্ধা করেন। এমনকি তারা ছাত্র আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বাণী ব্যবহার করেছেন। তাদের ক্ষোভ স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের প্রতি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান আছে বলেই তারা বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের আন্দোলনে ধারণ করেছেন। যারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন, তারা শিক্ষার্থী নন। বরং কেউ যাতে আর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে আঘাত না করতে পারে, সেজন্য নিরাপত্তা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট যাতে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও ভক্তরা শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সেজন্য শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভাঙা নামফলকে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি এঁকেছেন। সেই সঙ্গে গ্রাফিতি সংলগ্ন দেয়াল ও সিঁড়িতে তারা লিখেছেন, ‘বর্তমান যদি অতীতকে ধারণ না করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যৎ হবে শূন্যতায় পূর্ণ। ’ এ থেকেই বোঝা যায়, শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসকে আজীবন স্মরণ করবে।
১৫ আগস্ট শ্রদ্ধা জানাতে অনুমতি চাইল আ. লীগ
আগামী ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এদিন রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চায় দলটি।
এর অংশ হিসেবে নিরাপত্তা চেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ গণমাধ্যমকে এমনটি নিশ্চিত করেছেন।
১৫ আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা নিয়ে হানিফ বলেন, ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য দলের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি সেই অনুমতি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
এসসি/আরএইচ