লক্ষ্মীপুর: র্যাবের গুলিতে আহত হওয়ার প্রায় ১১ বছর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন সাবু।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল সদর আদালতে এ মামলাটির আবেদন করা হয়।
আদালতের বিচারক আবু সুফিয়ান নোমান আবেদনটি আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে সদর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। ঘটনার হুকুমদাতা হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী, সাবেক পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক এডিজি মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, সাবেক এআইজি মাহফুজুর রহমান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, র্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাইদ, মেজর (অব.) মো. আরিফ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) রানা, ডিএডি (অব.) জাহাঙ্গীর আলম, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, তার ভাই শিবলু, সাবেক পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া এবং র্যাবের আরও ১৪ কর্মকর্তাসহ ৩৫ জন।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির এ নেতার বাসভবনে ঢুকে তার ডান উরুতে গুলি করেন র্যাব সদস্যরা। ওই দিন র্যাবের গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। একজনের মৃতদেহ গুম করা হয়।
মামলায় অন্যদের মধ্যে সাক্ষী রাখা হয়েছে জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ও সদর থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেনকে।
মামলার এজাহারে সাহাব উদ্দিন সাবুকে গুলি করে আহত করা ছাড়াও ঘটনার দিন র্যাবের গুলিতে বিএনপি কর্মী শিহাব ও মাহবুব এবং যুবদল নেতা ইকবাল মাহমুদ জুয়েলকে গুলি করে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। জুয়েলের মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি, সেটি গুম করা হয়। এছাড়া র্যাবের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এবং পঙ্গুত্ব বরণ করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী আহম্মদ ফেরদাউস মানিক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সেই সময়ের শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের ডিজিসহ অন্যদের নির্দেশে র্যাব সদস্যরা বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন সাবুকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করেন। এতোদিন তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর তিনি বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত বাদী এবং আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে এজাহারটি সদর থানাকে এফআইআর হিসেবে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ বাদী দীর্ঘদিন পর ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে মামলাটি করতে পেরেছেন। আশা করি, তদন্ত করে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
মামলার বাদী বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, ঘটনার সময় আমি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ছিলাম। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার দেশব্যাপী বিএনপির আন্দোলনকে দমন করার পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ভোরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তখনকার কর্মকর্তা তারেক সাইদের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা শহরের উত্তর তেমুহনীতে আমার বাসভবনে হানা দেন। আমি প্রাণভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর সময় সাবেক পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু ও তার ভাই শিবলুসহ সন্ত্রাসীরা আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখান। এরপর আমি না পালিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ি। র্যাব আমার দরজা নক করে আমার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেওয়ার পর র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদ পিস্তল বের করে আমার ডান পায়ের উরুতে গুলি করেন। তারা আমার বাসভবনে থাকা কোটি টাকার তিনটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে তাদের পিকআপ ভ্যানে তুলে সদর থানায় নিয়ে পুলিশে সোপর্দ করতে চান। কিন্তু আমার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পুলিশ আমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাতে বলে। তারা আমাকে হাসপাতালে না নিয়ে থানার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে আমি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। এ ফাঁকে যুবদল নেতা জুয়েলকে গুলি করে তার মৃতদেহ নিয়ে যায় র্যাব। শিহাব ও মাহবুব নামে আরও দুজনকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা আমাদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যোগ করেন সাবু।
বাদী আরও বলেন, এতো বছর মামলা করতে পারিনি। র্যাবের ভয়ে বিদেশে গিয়ে আত্মগোপন করতে হয়েছে। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আজ আমি মামলা করেছি। আমি শেখ হাসিনাসহ আসামিদের ফাঁসি চাই, বিচার চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
এসআই