ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপির সভায় বক্তব্য দিলেন আন্দোলনে হামলাকারী শ্রমিক লীগ সভাপতি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
বিএনপির সভায় বক্তব্য দিলেন আন্দোলনে হামলাকারী শ্রমিক লীগ সভাপতি! বিএনপির সভায় শ্রমিক লীগ সভাপতি গোলাম নাছির

ফরিদপুর: জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রধান অতিথি এমন একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম নাছির।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের অন্যতম সমন্বয়ক আবরাব নাদিম ইতু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান। সভাটি বিকেল ৪টায় শেষ হয়।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি এই গোলাম নাছির। তিনি ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরাসরি তার বাহিনী নিয়ে হামলায় অংশ নেন। আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানেও ঢাকায় তার দলবল নিয়ে অংশ নেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলায় ছাত্র হত্যার কমপক্ষে পাঁচটি মামলা হয়েছে। সেই থেকে পলাতক গোলাম নাছির। শুধু নাছির একা নন, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে দেখা গেছে জেলা শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জুবায়ের জাকিরকে। পুলিশ খুঁজে না পেলেও, এমন একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে দেখে হতবাক ফরিদপুরের সাধারণ মানুষ ও ছাত্রসমাজ। ভাইরাল ভিডিওতে তারা পুলিশ ও বিএনপির প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করে চলেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের অন্যতম সমন্বয়ক আবরাব নাদিম ইতু বলেন, এই নাছির তার সহযোগীদের নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার ওপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে। সেসময় পুলিশও তাদের সহযোগী ছিল। আমরা এই নাছির ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাছিরের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় অনুষ্ঠানে অতিথিদের সামনে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষে বহিষ্কৃত এই নেতা বক্তব্য রাখছেন। এসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের বহিষ্কৃত সভাপতি ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জুবায়ের জাকির।

বক্তব্যের প্রথমে নাছির মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি, সভাপতি ও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে অ্যাড্রেস করেন। পরে বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ২২ বছর ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন যখন যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আমরা শ্রমিক ফেডারেশনে সঙ্গে থেকেছি। বিগত দিনেও আমরা শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করেছি, আগামীতেও করবো।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গোলাম নাছিরের আসল নাম আশরাফুল আলম নাছির। শহরের ওয়্যারলেস পাড়ার বাসিন্দা এই নাছিরের বাবার নাম মৃত মনিরুজ্জামান ওরফে বদরুল। ফরিদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ২৩ নম্বরে ছিল গোলাম নাছিরের নাম। সন্ত্রাস, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বোমা প্রস্তুত ও অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহের অসংখ্য মামলার আসামি নাছির।

উল্লেখ্য, এক সময়ের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো যার পরিবারে সেই নাছির এখন নামে বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। একের পর এক অপরাধে যুক্ত হয়ে পুলিশের কালো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হলেও নানা কৌশলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে নাছির। রাস্তার বখাটে সন্ত্রাস থেকে প্রথমে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং তারপর ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সর্বশেষ জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি বনে যান গোলাম নাছির। নাছিরের বোন ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদা বেগম ও বড় ভাই তপন ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখেছি। ওই গোলাম নাছিরকে আটক করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।