ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকারকে পথ দেখাতে তীব্র সমালোচনা করতে হবে: সালাহউদ্দিন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
সরকারকে পথ দেখাতে তীব্র সমালোচনা করতে হবে: সালাহউদ্দিন

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের কিছু ভুল শুধরে সঠিক পথে এনে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণের জন্য শিগগিরই বিএনপি কিছু পদক্ষেপ নেবে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ‍্যাসোসিয়েশন (বিজেএ) কর্তৃক ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের গতিপথ, মানুষের জীবন কীভাবে নির্বাহ হবে, আইনের শাসন কীভাবে নিশ্চিত হবে সেটা এ দেশের মানুষেরাই নিশ্চিত করবে মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাইরে কোনো শক্তি নয়। এদেশে গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের মধ্যে আলোচনা হবে, ডিবেট হবে, দ্বিমত হবে। এটাই গণতন্ত্র। আমাদের সামনে যাওয়ার একটাই পথ, আমরা আলোচনা করব, দ্বিমত পোষণ করব, বহুমত পোষণ করব, সিদ্ধান্ত নেবো বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে। এক্ষেত্রে সব পক্ষই পরাজিত হবো, জিতবে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষকেই জিততে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে পরাজিত হতে হবে।

সামনের দিনে আমরা কী কী সংস্কার চাই এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, কীভাবে নির্বাচন চাই, কখন নির্বাচন চাই? এখনকার প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা, ব্যর্থতা, সিদ্ধান্তহীনতা। যদি আমরা এ সরকারকে সফল করতে চাই, তবে সরকারকে গাইড করতে তাদের তীব্র সমালোচনা করতে হবে। এমনকি সড়কে আন্দোলন করতে হতে পারে, সরকারকে সঠিক রাস্তায় আনার জন্য। সরকারের সিদ্ধান্তে ভুল হতে পারে। সেটা সব সরকারের জন্য প্রযোজ্য। অন্তর্বর্তী সরকার সব সিদ্ধান্ত যে নির্ভুলভাবে নেবে, এটা ঠিক নয়। ভুল তাদেরও হতে পারে। সেটাকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের কিছু ভুল শুধরে সঠিক রাস্তায় এনে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণের জন্য এবং একটি নির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক পথ পরিষ্কার করার জন্য শিগগিরই আমরা কিছু পদক্ষেপ নেব। এটাকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বলতে পারেন, সমালোচনাও বলতে পারেন।

এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার উক্তি তুলে ধরে বলেন, তিনি বলেছেন যে ‘আমরা যেন সঠিক পথে থাকতে পারি, সেজন্য সমালোচনা করতে হবে। ’ অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুণ আছে, মাঝেমাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সমালোচনার মুখে তা শুধরে নেয়। গো ধরে বসে থাকে না। সরকার যখন ভুল শোধরায়, তখনই মনে হয় এ সরকার জনগণের সরকার।

‘নির্বাচন যদি বিলম্বিত করা হয়, কী কারণে বিলম্বিত করবেন? সে যুক্তিগুলো সরকারকে তুলে ধরতে হবে। ইতোমধ্যে ছয় মাস পার হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট প্রদান করেছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট পেশের পর দেশের রাজনৈতিক শক্তি, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপন করার কথা। কিন্তু ১৪ দিন হয়ে গেল, এ ধরনের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি সরকারের পক্ষ থেকে। ’

‘সংস্কারের মধ্যে যে বিষয়গুলো রাজনৈতিক শক্তি ও গণতান্ত্রিক শক্তি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে সেগুলোকে আগে চিহ্নিত করুন’ সরকারের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো দেশের রাজনৈতিক কালচার ও সমাজে যায় না সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। আমি দেখলাম, সংবিধান সংস্কারের প্রথম অংশেই স্বাধীনতার মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জুলাই আগস্টকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের যে কোনো প্রেক্ষাপট কি স্বাধীনতার সঙ্গে যায়? এটা চিন্তা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা এখন বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছি। কালকেও দেখলাম আওয়ামী লীগ এ দেশে নির্বাচন করতে পারবে না। নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, নিষিদ্ধ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে। যেই দল ফ্যাসিবাদী চরিত্রে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যে দল দায়ী, সে দলের নির্বাচিত সরকার দায়ী অনির্বাচিত হলেও। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এ দেশে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। সুতরাং সেই ব্যক্তির সঙ্গে সেই সংগঠনেরও বিচার করতে হবে।

বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, যারা দায়ী সেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে, সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীসহ সবার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য জায়গায় মামলা হয়েছে। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সংগঠন হিসেবে একটা রাজনৈতিক দলের বিচার করার প্রবিশন আর্টিকেল ৪৭ এ আছে। সুতরাং সেই সংগঠনের গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠনের বিচারের জন্য আমরা তো এখনো পর্যন্ত তত বেশি সোচ্চার নই, কেউ তেমন উচ্চারণ করছে না। কেউ যদি বিচ্ছিন্নভাবে বলে যে নির্বাচন করতে দেবো না; সে ব্যাপারে আইন কী বলে, নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা করে সে সময় পর্যন্ত যাদের রেজিস্ট্রেশন বৈধ থাকবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এটাও তো মাথায় রাখতে হবে।

সংবিধান সংস্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন একটা জিনিস সবাই বুঝে এসেছে যে সংবিধান রিরাইটের প্রস্তাবে কেউ নেই। সবাই সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ‍্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পার্থ সারথি দাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা বাছির জামাল ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
টিএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।