পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ক্রোধের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। এরই ফলশ্রুতিতে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি এ বক্তব্য দিয়েছে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে। ’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানান ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ’
‘জুলাই আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিন্দিত ঘৃণিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি অগ্রাধিকার, অথচ এসব বিষয়ে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। ’
এখনো প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে। ’
‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি। ’
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ’
‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেওয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরণের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ’
বিএনপির উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান। সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৫
এইচএ/