ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

‘এটিএম আজহারকে মুক্তি না দিলে কারাগার ঘেরাও’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
‘এটিএম আজহারকে মুক্তি না দিলে কারাগার ঘেরাও’

সিলেট: জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, ছাত্র জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। প্রধান বিচারপতিকেও পালাতে হয়েছে।

সেসব জ্যুডিসিয়াল কিলারদের প্রহসনের বিচারে জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো কারাগারে কেন জাতি জানতে চায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত এরই মধ্যে অনেক পরীক্ষা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমরা জীবন দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি, জুলুম-নিপীড়নে শিকার হয়েছি। কিন্তু হার মানিনি, মানবোও না। ২০ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে জননেতা এটিএম আজহার ভাইকে মুক্তি দিন। অন্যথায় উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে তৎকালিন বিরোধী দলের সাজাপ্রাপ্ত সকলেই মুক্ত হয়েছেন। তাহলে এটিএম আজহার এখনো জেলে কেনো? ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করে আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন আর আজহার ভাই জেলে থাকবেন তা হবেনা। ফ্যাসিস্টের যেসব দোসররা সরকারের ভেতরে বাইরে রয়েছে আমরা তাদের চিনি। তারা জননেতা আজহারের মুক্তি বাধাগ্রস্থ করছে। এদের সরকার থেকে বিদায় করুন। অন্যথায় পরিনতি ভালো হবে না।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সিলেট জেলা ও জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবীতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে সমাপ্ত হয়। মিছিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে রাজপথে জামায়াতের মিছিল ঘিরে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর সেক্রেটারী মোঃ শাহজাহান আলী ও জেলা সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীনের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান আরো বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার জামায়াতকে নেতৃত্ব শুন্য করতে নতুন আইন করে অবৈধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই আইন দেশ-বিদেশে কোথাও বৈধতা পায়নি। সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী, আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাসিতে ঝুলিয়ে এবং কারাগারে হত্যা করেছে। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর সেই অবৈধ ট্রাইব্যুনালের কোন রায় এদেশে কার্যকর থাকতে পারেনা। অবৈধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিচারপতিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার দাগিদ ও প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনী নিজে অবগত আছেন। আপনাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত আদালতে টানা-হেচড়া করা হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্ট আদালতে বসিয়ে রাখা হয়েছে, ৫ তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে উঠতে বাধ্য করা হয়েছে। সেই হাসিনার প্রতিহিংসার বিচারে এটিএম আজহারুল ইসলামকে এখনো বন্দী থাকতে হবে কেন? আজকে শুধু সিলেট নয়, সারাদেশে আজহার ভাইয়ের অনুসারীরা গর্জে উঠেছে। অবিলম্বে থাকতে মুক্তি না দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর এ দায় আপনাকেই নিতে হবে।

মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, জামায়াত বাংলাদেশে অনেক পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের আর পরীক্ষা নিবেন না। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এটিএম আজহারকে মুক্তি দিন। প্রধান উপদেষ্টাকে বলছি- আমরা আপনার প্রতি আস্থা রেখেছি, আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আমরা গন্ধ পাচ্ছি আপনার আশপাশে ফ্যাসিস্টরা বসে ষড়যন্ত্র করছে। যেখানে জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্ব আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। সুতরাং তারা যেসব বিচার করেছে সেটাও মানবতাবিরোধী। এই বিচারের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম মজলুম জননেতার মূর্ত প্রতীক। মিথ্যা মামলার ফরমায়েসী রায়ে আজহার ভাই কারাগারে রাখা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রধান বিচারপতির পালিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে তিনি বিচারের নামে অবিচার করেছেন। ২০ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে আজহারকে মুক্তি না দিলে কারাগার ঘেরাও কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো।

বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও হাফিজ মাওলানা আনওয়ার হোসাইন খান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, জেলা সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাসুক আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী ও সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু ও ফেডারেশনের সিলেট জেলা সভাপতি ফখরুল ইসলাম খান, ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, শাবি ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার, ছাত্রশিবির সিলেট জেলা পশ্চিমের সভাপতি মনিরুজ্জামান পিয়াস ও জেলা পূর্বের সভাপতি মারুফ আহমদ রাজু।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
এনইউ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।