ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকারের সুবিধা নিয়ে দল গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: ফখরুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
সরকারের সুবিধা নিয়ে দল গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: ফখরুল মির্জা ফখরুল

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারে থেকে ‘কতিপয় উপদেষ্টা’ নতুন দল গঠনের কৌশল নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।

 

রাজধানীর ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে ছাত্রদল ঢাকা মহানগরের সদস্য সংগ্রহ, ফরম বিতরণ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমে নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করে উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। তারা চেষ্টা করছেন অতিদ্রুত কিছু কাজ শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার। কিন্তু এর মধ্যেই কতগুলো সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। সেই সন্দেহটা হচ্ছে যে, আদৌ নির্বাচনের ব্যাপারে এরা আন্তরিক কিনা।  

তিনি বলেন, গতকাল আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন যে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের লোকেরা যদি কেউ মাফ চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে তারা অংশ নিতে পারবে। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা এখন নিজেদের স্বার্থে ওই ফ্যাসিস্টদের জায়গা দিতে চায়। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার গতকালকে যে কথাটা বলেছেন, ইট ইজ ডেঞ্জারাস। তার মানে কী? আমরা এটা মনে করব যে, তারা সরকারে থেকে তাদের দল গোছানোর জন্য বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছেন। সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেব না, এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।

তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করেই বলছি, অবশ্যই নতুন যখন রাজনৈতিক দল গঠন হবে তাকে আমরা স্বাগত জানাব। ছাত্র সংগঠন করেছেন আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যারা দল তৈরি করবেন আমরা স্বাগত জানাব। তার মানে এই নয় যে, আপনারা সরকারে বসে, সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আপনারা দল গঠন করবেন সেটা কখনই মেনে নেওয়া হবে না, জনগণ মেনে নেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি এই সরকার এবং সরকার প্রধানকে বলতে চাই, আপনি অবিলম্বে এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তা না হলে জনগণের যে আস্থা আপনাদের ওপরে আছে সেই আস্থাও থাকবে না। তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম বলেছিলাম যদি এই অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারায় তাহলে আরেকটি নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। কেন বলেছিলাম তা এখন প্রমাণ হচ্ছে। তখন একজন (উপদেষ্টা) বলেছিলেন আমি একটি এক এগারোর দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা এক এগারোর ভুক্তভোগী, এক এগারো যারা সৃষ্টি করেছিল তারা টিকতে পারেনি জনগণের কাছে। আবারো হুঁশিয়ার করে বলতে দিতে চাই, যদি আবার কেউ সেই এক এগারোর কথা চিন্তা করেন, গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে আবার এক দলীয় শাসন ফ্যাসিস্ট সরকারের দিকে যেতে চান তাহলে কখনোই জনগণ তা মেনে নেবে না।  

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের জ্ঞান চর্চার ওপর গুরত্বারোপ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের শুধু আন্দোলন, শুধু সংগঠন এসব করলেই চলবে না, আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অবশ্যই জ্ঞানচর্চাটা করতে হবে। জ্ঞানচর্চাই হবে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে মূল কেন্দ্র। তা না হলে আমরা এগোতে পারব না। যারা মেধাবীদের সামনে আনতে হবে। প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, ধারণা থাকতে হবে। আমি নিজেই ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। আমি ৬০-এর দশকে ছাত্র রাজনীতি করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  

তিনি বলেন, সেই সময়ে আমাদের সংগঠন পড়াশোনা জন্য স্টাডি সেল তৈরি করতো.. সেখানে পড়াশোনা হতো, পরীক্ষা হতো, তারপরে পদোন্নতি হতো। পদ পাওয়া নির্ভর করতো যে আমি কতটুকু জানি তার ওপরে এই বিষয়টা যদি আমরা ছাত্রদলের মধ্যে চালু করতে পারি তবেই শক্তিশালী হবে সংগঠন। আমি অনুরোধ রাখব এরকম চিন্তাভাবনা নিয়ে আসতে হবে।

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা এমবিবিএস পাস করে বিদেশে সরাসরি ভর্তি হতে পারে  না। কারণ ওরা (বিদেশ) মনে করে যে, এখানে যে এমবিবিএস পড়াশোনা সঠিক হয় না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশে মাস্টার্স পাস করে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে গেলে তাদের আবার ল্যাংগুয়েজসহ বিভিন্ন পরীক্ষা দিতে হয় যেটা আগে ছিল না। কারণ শিক্ষার ব্যবস্থাটা আগে এমন ছিল যে, একজন শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শী হতে পারে তার ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার ওপর কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যিনি সকল প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্রদের নিয়ে জাহাজে সমুদ্রে দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা শুধু সমুদ্র দেখার জন্য নয়, ওখানে বসে সমুদ্রের নিচে কি সম্পদ আছে, সমুদ্র যে কি একটা বিশাল সম্পদের ক্ষেত্র যেখান থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তন হতে পারে যেটাকে ব্লু ইকোনমি বলা হয় সেই বিষয়টা শহীদ প্রেসিডেন্ট ৭৯-৮০ সালে দেখেছিলেন সেজন্য আমরা তাকে বলি একজন ক্ষণজন্মা নেতা। ছাত্রদেরও বললো, তোমরা বেশি করে জ্ঞান অর্জন করো।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই লড়াইটা আমরা এখন একটা ক্রান্তিকালের লড়াইয়ে এসে পৌঁছেছি। এই লড়াইয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য, টলারেন্স এবং মেধার চর্চা করা। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমাদেরকে সক্রিয় হতে হবে। তোমরা মোবাইল সেটটা ভালো বুঝ..ওখানে লড়াইটা চালাও, ওই জায়গায় যদি তোমরা লড়াই করতে পারো তাহলে কেউ তোমাদের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।

আলোচনা সভায় এবার ‘স্লোগান’ না থাকায় নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে খুব আমার লাগছে যে, কোনো স্লোগান হয়নি, হচ্ছে না। এটা আমার খুব আনন্দ লাগছে যে, আমার মনে হচ্ছে যে, এতো দিন যে কথা বলেছি অন্তত আজকে একটা বাস্তবায়ন হয়েছে।  

কারণ ছাত্রদল ছাত্রদল। উত্তর-দক্ষিণ? স্লোগান দাও যে মাঝে-মধ্যে অমুক ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে এটাও দরকার নাই। আমাদের ভাই একজনই তারেক রহমান, আমাদের নেত্রী একজনই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, আমাদের দার্শনিক আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা একজনই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।  

ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক রকিবুল ইসলাম বকুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তরের মোস্তফা জামান, ছাত্রদলের পূর্বের সভাপতি সোহাগ ভুঁইয়া, উত্তরের সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের সভাপতি শামীম মাহমুদ ও পশ্চিমের সভাপতি রবির খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
টিএ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।