ঢাকা: ভোরের আলো ফুটতেই শোনা গেল সেই চিরচেনা সুর। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে একুশের এ চিরচেনা সুর মেলালেন নাগরিকদের অনেকেই। ভোর থেকেই তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেছেন। অনেকেই এসেছেন শোকের কালো রঙ জড়িয়ে। কেউ কেউ হাতে ফুল নিয়ে; কেউ বা মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে।
ফার্মগেট থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন দেখতে এসেছেন তরুণ তাহসিন আলম। প্রথমবার শহীদ মিনারে এসে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর নতুনভাবে বাংলাদেশকে উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বায়ান্নর প্রেরণাকে চব্বিশের চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে উপলদ্ধি করতে আজ ভোর থেকেই আমি হেঁটে হেঁটে শহীদ মিনার দেখেছি।
তার সঙ্গে এসেছেন আরেক তরুণ তাওসীব হোসাইন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শহীদ মিনারকে কখনো এত কাছ থেকে দেখিনি। সকাল সকাল শহীদ মিনার দেখতে তাই খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।
সকালেও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন পুস্পস্তবক দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখা চিরন্তন চত্বর থেকে প্রভাতফেরির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তারা ফুলার রোড হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন এবং সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার দাঁড়িয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানান। উপাচার্যের পর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।
সকাল ৮টা নাগাদ বিএনপি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি দল শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বিএনপির মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভাষা আন্দোলনের সোপান পেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেছি। যখন আমরা স্বৈরাচারের কবলে পড়েছি, তখন বায়ান্ন আমাদের লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ প্রেরণাতে আমরা দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে, ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে জুলাই-আগস্ট সংগঠিত হয়েছে। সেই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ, উৎপীড়ক, রক্তপিপাসু স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অথচ গণতন্ত্রের পক্ষে থাকলে তাদেরই ভালো হতো।
খালেদা জিয়ার উদাহরণ দিয়ে রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে থাকলে কেউ পালায় না। এর উদাহরণ খালেদা জিয়া। এত নিপিড়নের পরও তিনি জনগণ ও দেশ ছেড়ে যাননি।
এসময় নির্বাচনের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বাগ্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। পরে যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদের মধ্য দিয়েই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা উচিত হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
এফএইচ/এসআই