সিলেট: দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট মহানগর যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব চৌধুরী মাধবকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।
এর আগে, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সিলেট নগরের জিন্দাবাজারে রাত ৯টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন হকাররা। চাঁদা না দেওয়ায় ২ হকারকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এবং তাদের মুক্তি ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান।
আন্দোলনরত হকারদের অভিযোগ, সম্প্রতি যুবদল নেতা মাধব তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছেন। চাঁদা না দেওয়ায় শুক্রবার ২ হকারকে উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন হকাররা। তাদের মুক্তি, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং অভিযুক্ত মাধবকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিলে হকাররা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
এ সময় তিনি বলেন, যদি কেউ চাঁদাবাজি করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ব্যক্তি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বহিষ্কার করা হবে। হকারদের এ আন্দোলনে মাধবকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুকে নিজের অবস্থান উল্লেখ করে লিখেন, ‘আমি আমার রাজনৈতিক ঠিকানা জিন্দাবাজার সিতারা ম্যানশনে। প্রতিদিন আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে বসি। বেশ কিছু দিন থেকে আমার কাছে তথ্য ছিল যে ফুটপাতের হকারদের থেকে আমার নাম ভাঙিয়ে কতিপয় ব্যক্তি চাঁদা তুলে নেন, বিষয়টা আমি খতিয়ে দেখতে আমার ইউনিটের জুনিয়র ভাইদের নির্দেশ প্রদান করি। জুনিয়রদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমি নিশ্চিত হই যে, কতিপয় ব্যক্তি ফুটপাতের হকারদের থেকে আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় করে এবং যার এক বিশাল অংশ সিনিয়র দুজন বিএনপি নেতার কাছে পৌঁছে যায় এবং লোকাল লামাবাজারের দুই নেতাসহ বাকি অংশের টাকা ভাগাভাগি করে।
মাধব দাবি করেন, আমার কাছে খবর আসে আজকে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে এক ব্যক্তি ফুটপাতে অবস্থানরত মাথাপিছু সকল হকার থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করছে, নিশ্চিত হয়ে আজকে আমি আমার জুনিয়রদের তাকে হাতেনাতে ধরতে বলি এবং তাকে ধরার পরে নিশ্চিত হই যে, সে নিজে একজন হকার এবং বেশ কিছু হকার থেকে চাঁদা আদায় করছে। আমার জুনিয়র নেতাকর্মীরা তাকে হাতেনাতে চাঁদা আদায়কালে পাকড়াও করে এবং তার থেকে ১৭ হাজার ৮০০টাকা পাওয়া যায়।
যুবদলের এ নেতা আরও লিখেন, যেহেতু আমরা সিতারা ম্যানশন জিন্দাবাজারে রাজনৈতিক অবস্থান তাই তাকে সেখানে নিয়ে আসে এবং সে স্বীকার করে ‘বৈষম্য বিরোধী হর্কাস দল’ নামে ভুয়া সংগঠনের হয়ে চাঁদা তুলে এবং সে দাবি করে প্রাপ্ত টাকার ১০ হাজার টাকা তার নিজের বিজনেসের।
পরিশেষে যারা এ সংগঠন চালায় কিংবা যে নেতারা এই চাঁদার টাকার ভাগ নেন তাদের নাম বিষয়বস্তু মিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিব করার আগ মুহূর্তে চাঁদাবাজ নেতাদের আদেশে হকার নেতারা জিন্দাবাজার অবস্থান করে এবং আমি চাঁদা চেয়েছি বলে পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলে, যার কারণে আমি সব কিছু মিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিকলি করতে পারিনি এবং আমার বক্তব্য না নিয়ে সেই নেতারা চাপ দিয়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে বহিষ্কার করেন।
প্রসঙ্গত, ওই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় দুজন হকারকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক হকার। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসলেও তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়। উল্টো পুলিশকে ধাওয়া দেন বিক্ষুব্ধ হকাররা। পরে পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে যান। এরপর বিএনপি নেতার মধ্যস্থতায় হকাররা রাজপথ থেকে সরে যান।
এরপর মধ্যরাতে অভিযুক্ত সিলেট মহানগর যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়দীপ চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দেওয়া হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৫
এনইউ/জেএইচ