খুলনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। স্বৈরাচার শেখ হাসিনাবিরোধী জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাই নতুন এ দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
জুলাই আন্দোলনে যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, তাদের জীবনদানের প্রত্যাশা যেন পূরণ হয়, নতুন দলের কাছে এমনটি প্রত্যাশা করেছেন কেউ কেউ।
শনিবার (১ মার্চ) সকালে খুলনার গল্লামারী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ছাত্রদের নতুন দলকে স্বাগতম জানাই। পুরাতন তো অনেক দেখলাম। আশা করি নতুন কিছু হবে।
একই বাজারের ক্রেতা মুজিবর রহমান বলেন, নতুন দল নতুন কিছু করবে। রাজনীতির নামে কেউ যেন স্বৈরাচারী না হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়টি যেন নতুন দলের নেতারা মনে রাখেন।
খুলনা মহানগরীর দোলখোলা এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ বলেন, ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। আর এ কৃতিত্বের বড় দাবিদার ছাত্ররা। তারা নতুন দল গঠন করেছে। আশা করি দেশের আমজনতা তাদের পক্ষেই থাকবে। জনমানুষের স্বপ্ন পূরণে তারা কাজ করবেন।
মহানগরীর বড়বাজারের চাল ব্যবসায়ী জিয়াউল হক মিলন বলেন, বিগত দিনে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশের সাধারণ জনগণের ওপর অনেক অন্যায় অবিচার করেছেন। ঘুণেধরা ও পঁচে যাওয়া সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে ছাত্রদের নেতৃত্বের বিকল্প নেই। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে যারা নতুন স্বাধীনতা এনেছে তারা দুর্নীতি, ভণ্ডামি, জালিয়াতি মুক্ত একটি দেশ গড়ে তুলবে। যেখানে সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। কোনো বৈষম্য থাকবে না।
খুলনার খান জাহান আলী রোডের বাসিন্দা জাহিদুর রাহমান নামে এক ঘটক বলেন, জনগণের প্রত্যাশা তারা আদর্শিক স্লোগানের বাইরে বাস্তবসম্মত নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করবে। আশা করি তারা স্বাধীন, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে এবং কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হবে না। ভারত-পাকিস্তান বা আমেরিকাপন্থি রাজনীতির পরিবর্তে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করবে। সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি চর্চার পাশাপাশি তারা যেন বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সে দিকে দলটিকে খেয়াল রাখতে হবে। আন্দোলন ও প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারলেই তারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
ইউনি ভিশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ পরিবারতন্ত্র রাজনীতি থেকে মুক্তি চাই। নতুন জাতীয় নাগরিক পার্টির কাছে প্রত্যাশা লেজুড়বৃত্তিক শোষণমুক্ত রাজনীতি চাই যেখানে মেধা ও সততা হবে একমাত্র মানদণ্ড।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রাজনৈতিক দল। তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঘটা করেই দলটির শীর্ষ পদগুলোয় মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়। মূলত জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা এ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। তরুণদের এ নতুন রাজনৈতিক দলের ১৫১ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেন। প্রকাশ পেয়েছে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ আট নেতৃত্বের নামও। সেখানে প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ছাড়াও রয়েছেন আব্দুল হান্নান মাসউদ, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৫
এমআরএম/আরআইএস