ঢাকা, শনিবার, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২২ মার্চ ২০২৫, ২১ রমজান ১৪৪৬

রাজনীতি

আ.লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ আবার আলোচনায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
আ.লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ আবার আলোচনায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন সংগঠন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গটি আবারও আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হওয়ার পর বিভিন্ন দিক থেকে বারবার দলটি নিষিদ্ধের দাবি উঠতে থাকে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।

এ কারণেই বিভিন্ন সময় এটি রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে।

মূলত বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ সংক্রান্ত এক বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে নানা বক্তব্য আসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। কোনো কোনো দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন এবং মন্তব্য করছেন। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল সমাবেশও হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর মধ্য দিয়ে পতন হয় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলের। তবে তার আগে জুলাইতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ড চালান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে এক হাজার ৪শর বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গুরুতর আহত হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অনেকেই। অনেকের দুই চোখ, কারো কারো এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। ১১ হাজার সাতশর বেশি মানুষকে র‍্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

পতনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি করে আসছে। আওয়ামী লীগ যেন রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে সে দাবিও তোলা হয়েছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে এর জন্য দলটির নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল করার দাবি রয়েছে ৷

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে দলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সম্ভাব্য অপরাধের অভিযোগ থাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা করার বিষয়টি সরকার বাতিল করেনি। এটি এখনও আলোচনার টেবিলে রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর রাজনীতিতে এই প্রসঙ্গটি তাৎক্ষণিকভাবে আবারও আলোচনায় উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন বক্তব্য ও মন্তব্য উঠে আসছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাতে তার ফেসবুকের এক পোস্টে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। তিনি ওই পোস্টে লেখেন, ‘আসুন, সব যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দেব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নেই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে। ’

শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লেখেন, ‘আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির চেয়ে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম? গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক। ’

এদিন রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস্ ক্লাবে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপির ইফতার মাহফিলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবারও বলতে চাই, সরকারের এমন কোনো পক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। ’

আরেক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কথা হচ্ছে না। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের পর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর জনগণ ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই । আওয়ামী লীগের যারা অপরাধী তাদের বিচার নিশ্চিত হওয়ার পর যারা হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, তাদের যদি জনগণ রাজনীতি করার সুযোগ দেয় তবে আমাদের কিছু বলার নেই। যারা ছাত্র হত্যা করেনি, যারা অর্থ লোপাট করেনি এমন সৎ ব্যক্তি নেতৃত্বে এলে আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না- প্রশ্ন করেন রিজভী। ’

এদিকে শুক্রবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে ছাত্রসংসদ। এছাড়া ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে মিছিল করেন একদল শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
এসকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।