ঢাকা, বুধবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৫ রমজান ১৪৪৬

রাজনীতি

সেনবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করে দেওয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত: নুর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
সেনবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করে দেওয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত: নুর

বরিশাল: গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, আওয়ামী লীগের নতুন করে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। জুলাই-আগস্টে একটি শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে এত মানুষকে হত্যা করলো, এত মানুষকে আহত করলো, এত মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিলো এবং গত ১৬ বছরে বাংলাদেশকে একটা নরকে পরিণত করেছিল তার জন্য আওয়ামী লীগের ন্যূনতম অনুশোচনা নেই।

গণঅধিকার পরিষদ বরিশাল জেলা ও মহানগরের উদ্যোগে সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত কর্মী সভার শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় নুরুল হক নুর আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রধান এবং পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে দিল্লি থেকে নানা ধরনের উসকানিমূলক ষড়যন্ত্র বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং তার নেতাকর্মীদের উত্তেজিত করে রাস্তায় নামিয়ে একটা নৈরাজ্য তৈরির অপচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছিল। শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতে অবস্থিত, কাজেই শেখ হাসিনার অপতৎপরতার দায় দিল্লি এড়াতে পারে না। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসকে সরকারের পক্ষ থেকে তলব করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনার অপতৎপরতা বন্ধে যেন ভারত পদক্ষেপ নেয়। আমরা আমাদের চ্যানেলেও বারবার এটা বলেছি। ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় তাহলে বাংলাদেশের গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা এবং গণহত্যার দোসর আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী যারা ওখানে পালিয়ে আছে তাদের ফেরত দিতে হবে।

ডাকসুর সাবেক এ ভিপি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে, সেখানে নানা কারণে কিছুটা বিভক্তি এবং বিভাজন দেখা দিচ্ছে এটা সত্য। এ গণঅভ্যুত্থান রাতারাতি হয়নি, এর জন্য বিরোধী দলগুলো ১৬টি বছর ধরে সংগ্রাম করেছে। হয়ত জুলাই ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা সফল গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এ আন্দোলনের কারণে ছাত্র-তরুণদের প্রতি মানুষের একটা অন্যরকমের আশাভরসা প্রত্যাশা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেই আন্দোলনের নেতা হিসেবে অনেকেই খুবই পরিচিতি। তাদের একটা কথা মানুষ খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা গত কয়েকদিন ধরে বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দল নাগরিক পার্টির সংশ্লিষ্ট ছাত্র-নেতাদের যে বক্তব্য শুনলাম, সেটা দেশের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন সর্বত্র একটা অস্থিরতা আমি লক্ষ্য করেছি গত কয়েকদিন ধরে। কারণ তারা আন্দোলনের পরিচিত মুখ তাদের নেতৃত্বে, তাদের ডাকে সব মানুষ সাড়া দিয়েছিল সমর্থন করেছিল। সে পরিচিত ছাত্রনেতা যখন বলছেন- তার সঙ্গে সেনাপ্রধান কিংবা সেনাবাহিনীর এ ধরনের কথা হয়েছে ‘তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায়- রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে’। এটা কিন্তু জাতির মধ্যে একটা উদ্বেগ তৈরি করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেনাসদরে বিবৃতিতে আমরা জানতে পারছি-ছাত্র নেতারাই আগ্রহ নিয়ে কিন্তু সেনাপ্রধানের কাছে মিটিং করতে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান তাদের ডাকেনি। সেনাপ্রধান প্রটোকলে এ ছাত্রনেতাদের ডাকার কথাও না এবং এ গণ-অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর অত্যন্ত পজেটিভ ও সাহসী ভূমিকা ছিল।

তিনি আরও বলেন, ৯০ এ যেমন জেনারেল নুরউদ্দীন সাহেব স্বৈরশাসক এরশাদকে বলেছিল-“মিস্টার প্রেসিডেন্ট আমার জনগণের বুকের ওপর পাড়া দিয়ে, জনগণের ওপর গুলি চালিয়ে আমরা আপনাকে ক্ষমতায় রাখতে পারবো না”। এই সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আত্মীয় হলেও আমরা যতটুকু জানি- শেখ হাসিনাকে আগের দিন ৪ আগস্টই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন ক্ষমতা ছাড়তে হবে সে কথা। সে সেনাপ্রধানকে নতুন করে বিতর্কিত করা কিংবা সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া বা সেনবাহিনীর সঙ্গে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করে দেওয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এর পেছনে অন্য কোনো দুরভিসন্ধি আছে কিনা সেটা আমাদের পরিষ্কার হওয়া দরকার। বিশেষ করে আমাদের ছাত্রনেতা হাসনাত এবং সারজিসের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছিলেন তারা কেন ওখানে গিয়েছিলেন সেই বিষয় তাদের কাছ থেকে জানা দরকার। আপনারা দেখেছেন হাসানাত-সারজিদ একেকটা স্ট্যাটাস দিচ্ছেন আবার হান্নান মাসুদ বলেছেন তাদের দুজনের একজন মিথ্যা কথা বলছেন। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে নাগরিক পার্টি যেন ঘটনাটার তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য জাতির সামনে উন্মোচন করে। নাহলে এটি মারাত্মক ক্ষত তৈরি করবে।

তিনি বলেন, পুলিশ ফাংশন করছে না, সামরিক বাহিনী না হলে গত সাত মাসে যেটুকু স্থিতিশীলতা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটাও ভয়াবহ অবস্থা হতো। রাজনৈতিক দলের নেতাদের আগেও সেনাপ্রধান একটা পরিষ্কার বক্তব্য দিয়েছিল যে-১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো এ অভ্যুত্থানের অংশীজনরা শুরুর দিকে পরিষ্কার বলেছিলাম কোনো ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য, কাউকে এমপি-মন্ত্রী বানানোর জন্য এতগুলো সাধারণ মানুষ জীবন দেয়নি, এ সংগ্রাম করেনি। এ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিলুপ্ত করে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পরেই একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। কিন্তু গত সাত মাসে আমাদের যে পর্যবেক্ষণ তাতে বর্তমান সরকার প্রত্যাশিত মাত্রায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না, নানা ধরনের সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে একটা নির্বাচিত সরকার না থাকলে অনেকে নানা ধরনের ফায়দা নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করবে। সে ষড়যন্ত্র আমাদের গোটা জাতির জন্য একটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

তিনি বলেন, ওয়ান ইলাভেনের খবর আপনারা জানেন, অনেকেই বলেছেন এ হাসানাত-সারজিস কিংবা নাগরিক পার্টি সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের সাম্প্রতিক মন্তব্য আরেকটা ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তৈরির একটা নামান্তর আরকি। অনেকেই এটা বলছেন। কারণ হচ্ছে এরা বয়সে ২৩-২৪ বছর যাই হোক, ছাত্র হোক তাদের কথার কিন্তু গুরুত্ব আছে, তাদের কথা কিন্তু মানুষ শোনে। কারণ এখন তারা ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়ার মতো ট্রেন্ডে আছে, ক্লিক করলেই তাদের নিউজ দেখা যায়, তাদের কথা মানুষ শোনে। এ মুহূর্তে আমাদের রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটা অবাধু, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন তথা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের একটা জাতীয় ঐক্য, সংহতির প্রয়োজন।

ডাকসুর সাবেক এ ভিপি বলেন, অতিকথন কিছু বুদ্ধিজীবী, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী তাদের কেউ কেউ বলছেন, ছাত্র জনতা সৈনিকদের অভ্যুত্থান, মানে অফিসারদের ভূমিকা নেই, অফিসারদের এক্সক্লুড করছে। ৭৫-এ যেভাবে সামরিক বাহিনীর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করা আমরা দেখেছি, এখনও সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে একটা অঘটন ঘটানোর পাঁয়তারা চলছে।  এ বিষয়ে দেশবাসীসহ রাজনৈতিক মহলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাবো। সে সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানাবো সম্ভব হলে এ ঈদের আগেই আপনি চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একটা জাতীয় সংলাপ ডাকুন। যেহেতু ঈদ একেবারে সন্নিকটে ঈদের আগে সম্ভব না হলে ঈদের পরে করুন। সম্প্রতি সৃষ্টি হওয়া ধুম্রজাল নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনা না হলে, এখান থেকেই অন্য ধরনের পরিস্থিতি উদ্ভব হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
এমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।