ঢাকা: দীর্ঘ ৫৪ বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘বিদেশি প্রেসক্রিপশনের রাজনীতি’ ও ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের’ শিকার হিসেবে আখ্যায়িত করে নতুন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চায় জনতার দল।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে বনানীতে জনতার দলের দলীয় প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে দলটির নেতারা এ ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনতার দলের আহ্বায়ক (চেয়ারম্যান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল, সদস্য সচিব আজম খান, মুখপাত্র ও মুখ্য সমন্বয়ক মেজর (অব.) ডেল এইচ খান প্রমুখ।
জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান বলেন, বিগত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে বিদেশিদের দ্বারা প্রভাবিত রাজনীতি হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে একটি ফ্যাসিস্ট দল দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল। তবে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৩৬ দিনের লড়াইয়ের মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকেই নতুন প্রজন্ম একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রত্যাশা করছে, যার মূল ভিত্তি হবে বাক স্বাধীনতা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব। তারা কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের করদ রাষ্ট্র বা স্যাটেলাইট রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার এই জাগরণের ফলে দেশের ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে অন্যান্য দলগুলোর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জনতার দলের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই যাত্রায় দেশের বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ একত্রিত হয়েছে, তবে ইতিহাসে এই প্রথম সকল পেশাজীবীদের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হলো, যা গত ২০ মার্চ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে।
জনতার দলের মূল মন্ত্র তিনটি উল্লেখ করে মেজর (অব.) ডেল এইচ খান বলেন, সেগুলো হলো- সাম্য, ন্যায্যতা ও প্রগতি। নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার ধারণ করে ‘ইনসাফ জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে দলটি এগিয়ে চলেছে। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনীতিবিমুখ অনেক পেশাজীবীও দলে যোগ দিচ্ছেন। জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছেন।
এ সময় জনতার দলের সদস্য সচিব আজম খান জানান, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি একসময় রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তিনি এ দলে যোগ দিয়েছেন। আগামী দিনে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
তিনি আরও জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা। প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাকে বিকেলে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা হবে। উন্নত বিশ্ব আজ দক্ষ জনশক্তির অভাবে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে, তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে বিদেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনতার দলের আহ্বায়ক (চেয়ারম্যান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল বলেন, ৫৪ বছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তেমন আশাব্যঞ্জক ছিল না। তাই আমাদের লক্ষ্য হলো শিক্ষিত, সৎ ও সাহসী মানুষদের রাজনীতিতে আনা। আমরা দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি- প্রথমত, সবসময় রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলা এবং দ্বিতীয়ত, বিদ্যমান পচা রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিপরীতে গিয়ে নতুন পথে যাত্রা করা।
তিনি বলেন, আমরা গুটি কয়েক ভালো মানুষকে লক্ষ্য করে সামনে এগুতে চাই। যেহেতু আমরা নতুন দল হিসেবে সকল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারছি না। তাই এসব ভালো মানুষের মাধ্যমে আমরা সকলের কাছে পৌঁছাতে চাই।
আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল বলেন, তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিবর্তে যতজন ভালো মানুষ পাবেন, তাদেরকেই নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন। সব আসনে প্রার্থী দিলে যদি কিছু খারাপ লোকও দলে ঢুকে পড়ে, তাহলে তাদের দলের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে বলে তিনি মনে করেন।
অনেক নামীদামী ব্যক্তি তাদের দলে যোগ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু শর্ত পূরণ না হওয়ায় তাদের নেওয়া হয়নি। একটি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তারা এগিয়ে চলেছেন বলেও উল্লেখ করেন শামীম কামাল। তিনি দাবি করেন, জনতার দল বাংলাদেশের একমাত্র পেশাভিত্তিক রাজনৈতিক দল। তিনি সব পেশার মানুষকে দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। ছাত্র, সৈনিক (সিপাহী থেকে জেনারেল পর্যন্ত) এবং ৭৪টি এনজিও সম্মিলিতভাবে তাদের দলে যুক্ত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
জনতার দলের এই আহ্বায়ক আরও বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এই তিনটি শক্তির বড় বিস্তার রয়েছে এবং এদেরকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারা তৈরি করা সম্ভব হবে। তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২৪’র ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান পর্যন্ত চেতনাকে ধারণ করে তাদের পররাষ্ট্রনীতি, স্বাস্থ্যনীতি ও শিক্ষানীতি সহ সবকিছু সাজানোর চেষ্টা করছেন।
জনতার দলের আহবায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল জানান, তারা স্থানীয় ও জাতীয় উভয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। স্থানীয় নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য অবসরপ্রাপ্ত পেশাজীবীদের এবং জাতীয় নির্বাচনে জেলায় পরিচিত অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৫
ইএসএস/এমজে