ঢাকা: জনতার দলের মুখ্য সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মেজর (অব.) ডেল এইচ খান বলেছেন, জনতার দল পরবর্তী নির্বাচন করার জন্য আসে নাই, বরং জনতার দল পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে রাজনীতি করতে চায়।
মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর বনানীতে জনতার দলের কার্যালয়ে আগামী ২৪ মে অনুষ্ঠেয় ‘জাতীয় নিরাপত্তা সচেতনতা এবং তরুণদের জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ক মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভার প্রস্তুতিমূলক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
মুখপাত্র মেজর (অব.) ডেল এইচ খান বলেন, পৃথিবীর ৫৩টি দেশে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সবার সঙ্গে মুক্ত আলোচনা ও তাদের মতামত নিতে চাই। তাদের মতামত আমরা সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। সরকার বিবেচনা করবে। এই যে জন আকাঙ্ক্ষা আছে, তিনি (সরকার) কীভাবে পূরণ করবেন। সরকার যদি ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়, তাহলে আমরা সরকারকে দুইভাবে সহায়তা করতে পারি। প্রথমত, আমাদের কাছে এই ট্রেনিং এর ব্লক ও ডিটেল সিলেবাস রেডি করা আছে, এটা আমরা সরাসরি সরকারকে শেয়ার করতে পারি। প্রান্তিক বা উপজেলা পর্যায়ে এই ট্রেনিং করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের নিয়ে এই ট্রেনিং করা সম্ভব।
জনতার দলের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কীভাবে ইন্টারেকশন বা মেলবন্ধন কীভাবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডেল এইচ খান বলেন, তিন ধরনের উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে জনতার দল। ১. জাওয়ান মানে হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য (আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, বিজিবি ও পুলিশ। যত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আছেন, তারা আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। গত ১৭ মে ৬৪ জেলা থেকে এসে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এরা হচ্ছেন আমাদের একটি সেগমেন্ট। ২. আমাদের আরেকটি সেগমেন্ট হচ্ছে নওজোয়ান। এই নওজোয়ান মানে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। আমাদের ইশতেহারে লেখা আছে, জনতার দল পরবর্তী নির্বাচন করার জন্য আসে নাই। জনতার দল পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে রাজনীতি করতে চায়। তবে আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নেব। আমাদের দলের নিবন্ধন কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। নতুন দল নিবন্ধনের যেসব শর্ত আছে, সেসব শর্ত অনুযায়ী ২২ জেলা ও ১০০টি উপজেলায় কমিটি ও অফিস দরকার হবে। আমাদের এই কার্যক্রম চলছে। আগামী ২২ জুনের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য যে প্রয়োজনীয়তা আছে, আমরা তা উপস্থাপন করব।
৩. সাধারণ পেশাজীবী মানুষরাও আমাদের দলের অংশ হতে পারবেন। যেমন, আমাদের সাংবাদিক জনতার দল, কৃষক জনতার দল, শ্রমিক জনতার দল আছে।
তিনি বলেন, আমাদের মূলমন্ত্র ছাত্রদের জন্য একটু আলাদা। ‘জাতীয় নিরাপত্তা সচেতনতা এবং তরুণদের জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ক মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ছাত্রদের আকৃষ্ট করা। আমরা এই অনুষ্ঠান করছি শুধুমাত্র ছাত্রদের জন্য। জনতার দলের জন্য কাজ করতে হলে আগে আপনার নিজের জীবিকার একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে। আগে নিজের দক্ষতা দিয়ে পরিবার চালান। এরপরে আমাদের দলের রাজনীতিতে স্বাগত জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডেল এইচ খান।
এ সময় তিনি বলেন, আগামী শনিবার ‘জাতীয় নিরাপত্তা সচেতনতা এবং তরুণদের জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ক মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি), হল নম্বর ২, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
১. বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা ও মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ঝুঁকি সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করেছে। তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ এবং তাদের সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ জাতীয় নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি। মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণরা শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও জরুরি পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি অর্জন করতে পারে, যা তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।
২. বিশ্বে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রচলন ও উপকারিতা
বিশ্বের অনেক দেশে মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক বা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যেমন-
দক্ষিণ কোরিয়া: দেশটির সব পুরুষ নাগরিকের জন্য ১৮-২৪ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যা দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করে।
ইসরায়েল: পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যা জাতীয় নিরাপত্তা ও তরুণদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সহায়ক।
সুইজারল্যান্ড: নাগরিকরা স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন, যা জরুরি পরিস্থিতিতে দেশকে প্রস্তুত রাখে।
এই দেশগুলোতে প্রশিক্ষণ জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও দলগত কাজের দক্ষতা বাড়ায়।
৩. জনতার দলের দৃষ্টিভঙ্গি
জনতার দল মনে করে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সম্ভাব্য বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি বিবেচনায় তরুণদের জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা এবং মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা ও জাতীয় দায়িত্ববোধ জাগ্রত করবে, যা দেশের প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৪. মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা জনতার দল জনগণের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর জন্য তারা আগামী শনিবার (২৪ মে) ‘জাতীয় নিরাপত্তা সচেতনতা এবং তরুণদের জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ক একটি মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।
এতে আলোচক থাকবেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল ও মেজর (অব.) ডেল এইচ খান।
‘জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিসমূহ ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে আলোচনা করবেন শামীম কামাল। আর ‘মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করবেন ডেল এইচ খান।
এতে বিশেষ আকর্ষণ থাকছে, সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পরিচালনায় একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব।
বিশেষ উপস্থিতি: অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং এনজিও নেতারা।
৫. ২৪ মে অনুষ্ঠানের গুরুত্ব ও মিডিয়ার ভূমিকা: ২৪ মে ২০২৫-এর অনুষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনার এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের একটি প্ল্যাটফর্ম। যদিও তরুণদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার করা হবে। তবে মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যম এই অনুষ্ঠানের বার্তা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিয়ে এটিকে আরও অর্থবহ করে তুলতে পারে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি ও প্রচারণা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
সবাইকে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আপনার মূল্যবান মতামত ও সৃজনশীল আইডিয়া শোনার জন্য আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। দেখা হবে ২৪ মে, ইনশা’আল্লাহ!
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জনতার দলের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল, জনতার দলের সদস্য সচিব আজম খান, দপ্তর সম্পাদক মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল ইমরান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুবুল আলম, সহ-দপ্তর সম্পাদক (মিডিয়া ও সংস্কৃতি) মো. আতিকুল ইসলাম জুনেদসহ অনেকে।
এমএমআই/এসআই