ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

একজন চিন্তকের চিরপ্রস্থান

নিউজ ডেস্ক    | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৫৬, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫
একজন চিন্তকের চিরপ্রস্থান

একজন যুগের চেতনার প্রতীক, প্রাণবন্ত চিন্তক—বদরুদ্দীন উমর। পাকিস্তান সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে রাজনীতি ও লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন।

সেই দিন থেকে তার তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বাংলাদেশের বাম রাজনীতি ও সমাজচিন্তার ধারাকে সমৃদ্ধ করেছে।

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্ম নেন বদরুদ্দীন উমর। তার পরিবার ছিল জ্ঞান, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার সঙ্গে সুগঠিত। পিতা আবুল হাশিম ছিলেন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক। সাম্যবাদী চিন্তাধারার অধিকারী ছিলেন তিনি এবং পাকিস্তান গঠনের বিরোধীও। তবুও ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

উমর উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় এসে দর্শনে স্নাতকোত্তর করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এই শিক্ষাজীবন তাকে তাত্ত্বিক গভীরতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা অর্জনে সাহায্য করে।

দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হন এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগেরও প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সংস্কৃতি নামক রাজনৈতিক সাময়িকী সম্পাদনা করেন।

১৯৬০-এর দশকে প্রকাশিত তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা, সংস্কৃতির সংকট এবং সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা। তিনি তিন খণ্ডে পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতির ওপর সমন্বিত গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন, যা বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনায় পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত।

উমরের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। তিনি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখেছেন এবং উভয় ক্ষেত্রেই অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমার্জেন্সি অব বাংলাদেশ, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ, পশ্চাৎপদ দেশে গণতন্ত্রের সমস্যা, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য, সাম্রাজ্যবাদের নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা: নির্বাচন না অভ্যুত্থান?।

উমরের চিন্তাধারা সবসময় সমাজ, ইতিহাস এবং রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। সততা, নিষ্ঠা, আপসহীনতা ও দৃঢ়তার কারণে তিনি মানুষের মুক্তি, সমাজের উন্নয়ন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীলতার সঙ্গে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সংযুক্ত করেছেন। কৃষক ও শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

বদরুদ্দীন উমর রোববার (০৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি হাসপাতালে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান। আজও তার জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। সততা, নিষ্ঠা, আপোষহীনতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তার চলা পথ মনে করিয়ে দেয়— একজন সত্যিকারের চিন্তক কেমন হতে পারে।  

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।