ঢাকা, বুধবার, ১ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

দলীয় ‘সহযোগিতা না পেয়ে’ এনসিপি নেত্রীর পদত্যাগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৩, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
দলীয় ‘সহযোগিতা না পেয়ে’ এনসিপি নেত্রীর পদত্যাগ নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়া

দলীয় ‘সহযোগিতা না পেয়ে’ পদত্যাগ করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়া। কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জলিল বিশ্বাস মার্কেটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

দলীয় প্রধানের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে মায়া বলেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না কিংবা সরাসরি কোনো অভিযোগ তুলতে চাই না। তবে সত্য হলো আমি আমার বিবেক, সততা এবং নীতিকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে চাই না’

তিনি উল্লেখ করেন, গত আগস্টে বেশ কিছু অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি। ফেসবুকে আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার স্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলা হয়। এ নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালালেও দল থেকে তিনি কোনো সমর্থন বা সহযোগিতা পাননি।

মায়ার অভিযোগ, জেলা ও উপজেলা কমিটির কার্যক্রম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে মহানগর কমিটি। এতে জেলা পর্যায়ের নেতারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এমনকি প্রশাসনিক সহায়তাও পাচ্ছেন না। রাজশাহীতে একপক্ষ এনসিপিকে পক্ষভূত করার অপচেষ্টা করছে। সব ক্ষেত্রে তাদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছে এবং ব্যক্তিগতভাবে অপমান অপদস্থ করছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমি আগে কখনও কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নোংরা কমেন্ট করা হয়েছে সেখানে আমি নির্দোষ হওয়ার সত্ত্বেও দলীয়ভাবে কোনো সমর্থন ও সহযোগিতা পাইনি। আমি সামাজিক ও ব্যবসায়ীক সবক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ’

একমাস আগে তিনি কেন্দ্রীয় এনসিপিতে পাঠানো যে অভিযোগগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ‘পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন মায়া। কিন্তু মাস পেরুলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মঙ্গলবার  তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগপত্রে মায়া বলেছেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। ’

গত ১৮ জুন এনসিপির রাজশাহী জেলা ও মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকেই একের পর এক সংঘাত চলছে। ২৫ জুন দুই যুগ্ম সমন্বয়কারীর মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। নাহিদুল ইসলাম সাজু নামে জেলা কমিটির এক যুগ্ম সমন্বয়কারী একই পদে তার আরেক সহকর্মী ফিরোজ আলমকে লাথি দেন। এতে তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ঘটনার পরদিন জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এদিকে ফিরোজ আলমকে লাথি মারার ঘটনায় নাহিদুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মায়ার পদত্যাগের বিষয়ে কথা বলতে নাহিদুল ইসলামকে কয়েকদফা কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি। এ বিষয়ে পরে মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জেলা কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। এনসিপির এই নেতা বলেন, জেলা কমিটির তিন নেতা তথা মায়া, ফিরোজ আলম ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বহিষ্কার না করা হলে জেলা ও মহানগরের অন্য নেতারা পদত্যাগ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগ লেখা হচ্ছে। এটি টের পেয়েই মায়া আগেভাগে পদত্যাগ করেছেন।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।