ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

যখন প্রয়োজন রাজপথে থাকবেন খালেদা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
যখন প্রয়োজন রাজপথে থাকবেন খালেদা ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: যখন প্রয়োজন রাজপথে থাকবেন বলে নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, আমি বরাবর জনগণের কাতারেই আছি।

রাজপথে যখন প্রয়োজন তখনই পাবেন।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি বিশাল দল। সব সময় সুসংগঠিত।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নেতারা হরতালে মাঠে নামেন, নইলে মামলা দেয় কেন? তাহলে বলুন, এগুলো মিথ্যা মামলা। সেটা তারা স্বীকার করুক।

খালেদা জিয়া দাবি করেন, জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন সরকার করে, আমরা করি না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের কটূক্তির সাফাই গেয়ে খালেদা দাবি করেছেন, তারেক রহমান যা বলেছেন, তা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বলেছেন। নিজে থেকে কিছু বলেননি।

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরাও বিচার চাই। সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার হলে সমস্যা নেই। কিন্তু মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে, সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যেও ‘রাজবন্দি’দের মুক্তি দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন, দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই সংকট উত্তরণে অনতিবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ, ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই।

এ লক্ষ্যে সরকারের উদ্দেশে সাত দফা প্রস্তাব রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন। উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো- জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।

নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যেন জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।

নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।

সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।

বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন খালেদা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান।

তিনি বলেন, আমাকে নাকি একেবারে মাইনাস করে দেবেন। যারা আগে মাইনাস করতে চেয়েছে, তারাই একসময় মাইনাস হয়ে গেছে। আমাকে মাইনাস করতে পারে একমাত্র জনগণ।

সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অভিযুক্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, রাজনীতির ভাষা এখন কলুষিত। আপনারা যে ভাষায় কথা বলছেন, যেসব কাজ করছেন, তা ভবিষ্যতে ভালো হবে না। তাই বুঝে শুনে কথা বলবেন ও কাজ করবেন।

গাজীপুরে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় সরকার ও প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে খালেদা বলেন, কোন কর্মসূচিই বিরোধীদলকে করতে দেওয়া হচ্ছে না।

খালেদা বলেন, ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। ৠাব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। একটি অংশ ভাড়াটিয়া খুনির মতো আচরণ করছে।

এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে ৠাবের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, সরকার জনগণের ওপর একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। জাতীয় সরকার বিরোধী দলবিহীন হয়ে পড়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কোনো বিরোধীদল অংশগ্রহণ করেনি।

খালেদা বলেন, নতুন ও তরুণ ভোটাররা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এভাবে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা আকড়ে রেখেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ ও সব বিরোধীদলের চাওয়া সত্ত্বেও সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি মানছে না।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এ নিয়ে ৩ বার সংবাদ সম্মেলনে আসলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রথমবার ১৫ জানুয়ারি হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সে সময় খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারকে বেশিদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় রাখা বিপজ্জনক হবে।
 
দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনটি করেন সদ্য শেষ হওয়া বছরের ৪ ফ্রেব্রুয়ারি। এ সংবাদ সম্মেলন থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে ও পরে সারাদেশে নিহত নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা তুলে ধরেন এবং অবিলম্বে সংলাপে বসতে সরকারকে আহ্বান জানান।
 
এর পর দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সভা-সমাবেশে ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে অসংখ্যবার কথা বলেছেন তিনি।
 
বছরের শেষ দিনটিতে এসে হঠাৎ করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটি কৌতূহলের জন্ম দেন।
 
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার,  ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, সারোয়ারী রহমান, খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ।
 
জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান খান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মবিন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির চেয়ারম্যান ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পিপলস পার্টির (পিএল) চেয়ারম্যান গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম, ডেমোক্রেটি লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দীন একরাম প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।