ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জয় হবেই’

সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
‘গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জয় হবেই’ ছবি: সোহাগ/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন চলছে তার বিজয় হবেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।

ফখরুলের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান প্রমুখ। বক্তৃতা করে ছাত্রদলের নিখোঁজ দুই নেতার দুই সন্তানও।

ফখরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকারও নেই। আছে কেবল গুম-খুন। এই গুম-খুনে কেউ সন্তানহারা, কেউ বাবাহারা, কেউ ভাইহারা, কেউ স্বামীহারা হচ্ছেন।

এসময় সভায় নিখোঁজ বিএনপিকর্মীদের সন্তান-স্বজনদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ছোট ছোট শিশুদের দিকে তাকানো যায় না। তারা বাবা বাবা বলে কেঁদে ওঠে। তারা যখন সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে ‘আমার বাবা কোথায়? বাবার সঙ্গে স্কুলে যাবো’ তখন সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাই না।

এক পর্যায়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি বলেন, কোন দেশে বাস করছি? যিনি সন্তান হারিয়েছেন, যিনি স্বামী হারিয়েছেন, যিনি বাবা অথবা ভাই হারিয়েছেন তিনিই বোঝেন স্বজন হারানোর কী বেদনা।

ফখরুল বলেন, আজকে বাবা-সন্তান-ভাই-স্বামী হারানো প্রত্যেকের চোখে অশ্রু ঝরছে। এই অশ্রুর মূল্য অনেক। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে গুম-খুন হয়েছেন। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, অনেকে জেলে পুড়ছেন।

সভায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সমালোচনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি বলেন, এরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের। একদিকে মানবাধিকারের কথা বলছে, অন্যদিকে মানবাধিকার যে লঙ্ঘিত হচ্ছে, সে বিষয়ে কথা বলছে না।

মৌলিক মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার যে আন্দোলন চলছে তা চলবে ঘোষণা দিয়ে  ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আদায়ে গণতন্ত্রের রীতিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। যে অধিকার নেই তা ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন চলছে তার বিজয় হবেই।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, মানবাধিকার দিবসের আলোচনা সভায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা নেই। যারা বাবা-সন্তান-স্বামী-ভাই হারিয়েছেন তাদের কী দিয়ে সান্ত্বনা দেবো? এখন আমরা কেবল সহানুভূতিই জানাতে পারি। গুম-খুনের শিকার হওয়া মানুষগুলোকে ফেরত দিতে পারছি না। তবে, আমরা গুম-খুনের বন্ধের জন্য সংগ্রাম করছি। যেন এই খুন-গুম চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হলে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ এবং আইনের শাসন কিছুই নেই। এ কারণেই খুন-গুম হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে এবং গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হলে এসব বন্ধ হয়ে যাবে।

এসময় দেশে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও শান্তি নেই বলেও সমালোচনা করেন ব্যারিস্টার মওদুদ।

সাম্প্রতিক বিদেশি ও মুক্তমনা লেখক-প্রকাশকদের হত্যার নিন্দা জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বিএনপি জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্র নেই বলেই সুবিধাবাদীরা বিদেশি ও লেখক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এজন্য ঐক্য দরকার এবং আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাই কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকার যদি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায় তাহলে বিএনপি ঐক্য গড়তে প্রস্তুত বলেও জানান দলের স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।

সভায় নিখোঁজ বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজের শিশু সন্তান হৃদি ও ছাত্রদলের আরেক নেতা চঞ্চলের সন্তান আবদুল আহাদ বক্তব্য রাখে। তারা তাদের বাবাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫/আপডেট ১৮১১ ঘণ্টা
এমএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।