ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ চৈত্র ১৪২৯, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৫ রমজান ১৪৪৪

রাজনীতি

জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা

তদন্ত কর্মকর্তার অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ ৭ জানুয়ারি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
তদন্ত কর্মকর্তার অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণ ৭ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি তার অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।



জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন মামলাটির ৩২তম ও শেষ সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর আগে ৩১তম সাক্ষী (জব্দ তালিকার সাক্ষী) মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের সাবেক সিনিয়র ম্যানেজার কাজী রশিদউজ্জামানকে জেরা করেন খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরা করবেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান ও অন্য আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট টিএম আকবর।

সকাল সাড়ে দশটায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আদালতে দুই মামলায়ই খালেদা জিয়ার পক্ষে অনুপস্থিতির জন্য আবেদন জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। আদালত খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষীর জেরা ও নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের আদেশ দেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন সাক্ষী। অন্য ৩০ জন হচ্ছেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ, মামলার রেকর্ডিং অফিসার মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ইনসান উদ্দিন আহমেদ ও ক্যাশ অফিসার শাহজাহান খান, পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এইচ এম ইসমাইল, জনতা ব্যাংকের সাত মসজিদ শাখার জিএম শেখ মকবুল ও ফাহমিদা রহমান, সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ড. মো. হাফিজুর রহমান, এজিএম মো. আমিরউদ্দিন ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পরিতোষ চন্দ্র দে, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার নওশাদ মোহাম্মদ, রিলেশনশিপ ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম ও কাস্টমার সার্ভিসেস ম্যানেজার অলোক কান্তি চক্রবর্তী, সোনালী ব্যাংকের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট শাখার ক্যাশ অফিসার ওয়ালিদ আহমেদ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. মামুনুজ্জামান, মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের সাবেক সিনিয়র অফিসার সাইফুল আলম, মেট্রো মেকার্স কর্মকর্তা চৌধুরী এম এন আলম, সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার মেজবাউল হক, মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের এমডি এএফএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ডিএমডি মাইনুল ইমরান চৌধুরী, সাবেক ডিজিএম (ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস) জাকারিয়া খান, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এসইভিপি জিয়াউদ্দিন এম ঘুর্নি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার কামরুজ্জামান, দুদকের দুই কনস্টেবল মঞ্জুরুল হক ও সিরাজুল হক, দুদকের সহকারী পরিচালক নাজমুল আহসান, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম আব্দুল গফুর, এজিএম মো. হারুন অর রশীদ, মিরপুর শিল্প এলাকা শাখার ব্যবস্থাপক হারুন অর রশীদ ফকির ও জিএম আমিন উদ্দিন আহমেদ। তাদেরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ। তাকে আসামিপক্ষের জেরা বাকি রয়েছে। আগামী ১৪ জানুয়ারি এ জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জামিনে থাকা জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

তাদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষে হাজিরা দেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির আছেন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Alexa