ঢাকা: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন চলমান বলে উল্লেখ করে সকলকে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে নির্বাচন হয়নি, প্রহসন হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘এরপর থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নতুন পর্যায়ে আন্দোলন শুরু করেছি। এ আন্দোলন-সংগ্রাম কখনো উত্তাল, কখনো ধীরগতির হয়। পরিস্থিতির আলোকে আন্দোলনের কৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারিত হয়’।
‘এরশাদের স্বৈরশাসনের সময়ও আমরা কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিইনি। সুষ্ঠু নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আপসহীনভাবে চালিয়ে সফল হয়েছি।
‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণের সংগ্রাম কখনো বিফল হয়নি, ব্যর্থ হবে না’- বলেন খালেদা।
২০১৩ সালের ৩ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকালে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ না হওয়াকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘ওই সময় বিশ্বস্ত সূত্রে আমাদের কাছে খবর আসে, আমি সাক্ষাৎ করতে গেলে আমাদের গাড়িবহরের ওপর হামলা চালিয়ে তার দায় জামায়াতের ওপর চাপানো হবে। প্রাণনাশের এই চক্রান্তের কথা জেনে আমি বাধ্য হয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচি বাতিলের অনুরোধ জানাই’।
‘এর আগেরবার প্রণব মুখার্জি ঢাকা সফরে এসে পরিষ্কার করে বলেছিলেন যে, বিশেষ কোনো দল নয়, বাংলাদেশের জনগণ ও সব দলের সঙ্গে ভারত সুসম্পর্ক চায়। তার এ বক্তব্যে এবং এরপর তখনকার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আমি ভারত সফরকালে এই বক্তব্যের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশের একটি মহল আতঙ্ক বোধ করে। তারা চায়নি, ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎটি হোক। দুর্ভাগ্যবশত আমার সাক্ষাতের দিনটিতে অন্য একটি ইস্যুতে আমাদের জোটভুক্ত দল জামায়াত হরতাল দিয়েছিল। তারপরও আমরা সাক্ষাতের ব্যাপারে প্রবলভাবে আগ্রহী ছিলাম।
‘কিন্তু ঢাকায় প্রণব মুখার্জির অবস্থানস্থলের অদূরে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আগের সন্ধ্যায় বিশ্বস্ত সূত্রে আমাদের কাছে খবর আসে যে, আমি সাক্ষাৎ করতে গেলে আমাদের গাড়িবহরের ওপর হামলা চালিয়ে তার দায় জামায়াতের ওপর চাপানো হবে।
প্রাণনাশের এই চক্রান্তের কথা জেনে আমি বাধ্য হয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচি বাতিলের অনুরোধ জানাই। আগের রাতেই নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়ে ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তাদের মারফত এ অনুরোধ জানানো হয়’।
‘আমি বিশ্বাস করি, তারা বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। তবে এ নিয়ে আমাদের দেশের একটি বিশেষ মহল অহেতুক শোরগোল তুলেছে’।
৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) ফোন করার ব্যাপারটি ছিল লোক দেখানো, একটি সাজানো নাটক। একটি ধূর্ত চাতুরী মাত্র। তারিখ নয়, আলোচনাকে প্রাধান্য দিলে তিনি পরদিনও আমন্ত্রণ জানাতে পারতেন। রাজনীতিতে কৌশল থাকে, কিন্তু অপকৌশলে কোনো লাভ হয় না। ’
নিজের ও বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলায় সাজা আতঙ্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো অন্যায়-অপরাধ, দুর্নীতি করিনি। কাজেই ন্যায়বিচার হলে আল্লাহর রহমতে আমরা সসম্মানে বেরিয়ে আসব। অন্যায়ভাবে রায় ঘোষণা হলে তার পরিণাম ও প্রতিফল কী দাঁড়াবে তা সময়ই বলবে। ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের জরুরি সরকার আমাকে জেলে আটকে রেখে শত চেষ্টা করেও বিএনপি ভাঙতে পারেনি। ’
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রহসনের অংশীদার হবো না, নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনের একটা প্রধান পক্ষ বিএনপি। কাজেই আমাদের কথা শুনতে হবে। এজন্য আমরা সব সময় আলোচনার কথা বলে আসছি। এখনো আলোচনার দরজা খুলে রেখেছি’।
দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে খালেদা জানান, ‘দলকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। ক্রমান্বয়ে আরও বেশিসংখ্যক তরুণ ও নারীকে দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এএসআর