ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অস্বাভাবিক ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এই প্রস্তাব কোনো আলোচনার ভিত্তি হতে পারে না।
সোমবার (২১ নভেম্বর) তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
উত্থাপিত এ প্রস্তাব নাকচ করলেও তথ্যমন্ত্রী জানান, নতুন করে প্রস্তাব আনলে আলোচনার বিষয়টি ভাবা হবে।
ইনু বলেন, খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা সকল বিবেচনায় অযৌক্তিক, অবাস্তব, অসাংবিধানিক ও অস্বাভাবিক। তার প্রস্তাবনার উদ্দেশ্য দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে সাংবিধানিক শূন্যতার দিকে ঠেলে দেওয়া।
তথ্যমন্ত্রী সাফ বলে দেন, অসাংবিধানিক কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসবো না। এর অর্থ এই অসাংবিধানিক কোনো প্রস্তাবকে ‘এন্টারটেইন করা’।
খালেদা জিয়াকে ৭২ সালের সংবিধান পড়ার পরামর্শ দিয়ে ইনু বলেন, তিনি নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসুন, তখন আলোচনার বিষয়টি ভাবা হবে।
বিএনপি প্রধানের ১৩ দফা প্রস্তাবে বলা হয়- সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, রাষ্ট্রপতি সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাছাই কমিটি গঠন করবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করবে এবং রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত নামগুলো বাছাই কমিটিতে পাঠাবেন, সেখান থেকে অভিন্ন নামগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে। অভিন্ন নাম পাওয়া না গেলে রাষ্ট্রপতি বারবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
খালেদার এসব প্রস্তাবের মধ্য থেকে ‘সকল রাজনৈতিক দল’, ‘সর্বসম্মতিক্রমে’, ‘ঐক্যমত্য’, ‘অভিন্ন নাম’, ‘বারবার আলোচনা’- শব্দগুলোকে চিহ্নিত করেন ইনু।
এসব শব্দের ব্যাখ্যায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া সকল রাজনৈতিক দলের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তাতে জামায়াত, ফ্রিডম পার্টি, মুসলিম লীগ আছে। তিনি সকল রাজনৈতিক দলের আড়ালে জামায়াত, মুসলিম লীগসহ স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টিকে হালাল করার অপপ্রয়াস করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত, অভিন্ন নাম খুঁজে বের করতে বারবার আলোচনা করতে হবে বলে খালেদা জিয়া দেশ অনিশ্চয়তা সৃষ্টি এবং সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করতে চাইছেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বারবার আলোচনার নামে অনির্দিষ্টকাল ধরে আলোচনা করে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অস্বীকার করার উপায় নেই।
১৩ দফা প্রস্তাবে খালেদা জিয়া জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে যুক্ত করা এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
এর জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রতিরক্ষা বাহিনী কখনোই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে পড়ে না। নির্বাচনকালীন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্যের জন্য প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে তলব করতে পারে। কখনোই প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা ছিলা না। কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও বিচারিক ক্ষমতা নেই। খালেদা তার প্রস্তাবের মাধ্যমে মূলতঃ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেছেন। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচে জড়িয়ে ফেলার অপপ্রয়াস করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১২ সালে প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক, পিএসসির চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে বাছাই কমিটির সুপারিশ থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সবাই সাংবিধানিক পদ থেকে এসেছিলেন। খালেদা জিয়ার কি সাংবিধানিক পদের প্রতি কোনো আস্থা নেই?
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৬
জেপি/এইচএ/