ঢাকা: নির্বাচনের সময় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতাসহ মোতায়েনের যে প্রস্তাব করেছেন খালেদা জিয়া, তাকে কোনো ক্রমেই সামরিক আইন বলা যাবে না বলে মনে করে বিএনপি।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির অন্তত ৫ সদস্য এ বিষয়ে তাদের ব্যাখা তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে ১৮ নভেম্বর ১৩দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। সেখানে নির্বাচনের সময় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়নের প্রস্তাব করেন তিনি।
এরপর বিভিন্ন মহল থেকে খালেদা জিয়ার এ প্রস্তাবের সমালোচনা করা হয়। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসনের পরামর্শক হিসেবে পরিচিত ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক এ প্রস্তাবের সমালোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া প্রস্তাব উত্থাপনের পরে রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, নির্বাচন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি তাদের মতামত প্রদান করেছেন। প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে লেখা-লেখি হচ্ছে। তবে যেসব প্রশ্ন উঠেছে সেগুলোর ব্যাখা প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব।
সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপি দেশে সামরিক আইন চায় কি না?- বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতাসহ মোতায়েনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাকে কোনো ক্রমেই সামরিক আইন বলা যাবে না। জাতীয় প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তা করার জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের মোতায়েনকে সামরিক আইন বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই।
তাছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষমতা বোঝায় না। নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রতিরক্ষা বাহিনী সীমা লঙ্ঘন না করে দায়িত্ব পালন করবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নির্বাচন চলাকালে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করলে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, কারচুপি বহুলাংশে হ্রাস পায়-বলেন ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল। ফলে ওই দু’টি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। সুতরাং বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়নে মোটেও আইন লঙ্ঘন হয় না। সবাই মিলে এ ব্যাপারে একমত হলে সংবিধানেরও কোনো ক্ষতি হয় না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এটা করা যেতে পারে।
খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে- এমন সমালোচনার জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সংবিধান সামনে রেখেই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছি। সুতরাং সংবিধান কোথাও লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।
সব দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কৌশলে জামায়াতকে সঙ্গে রাখতে চেয়েছেন-এর জবাবে বিএনপির মহসচিব বলেন, প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সব দল বলতে আমরা কি বলতে চেয়েছি। এখানে অস্পষ্টতার বা কৌশলের কিছু নেই। বাস্তবতার আলোকেই এই প্রস্তাব প্রদান করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে বিএনপি কোনো আইন করতে চায় না কেন? বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে বর্তমানে ১৫৪ জন অনির্বাচিত সদস্য নিয়ে যে সংসদ বহাল রয়েছে, সে সংসদ যদি কোনো আইন বা বিধি প্রণয়ন করে তার নৈতিক ভিত্তি হবে খুবই দুর্বল। তবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আইনের কাঠামো অনুসরণ করে আইন প্রণীত হলে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব করা, নির্বাচন কমিশন গঠনে বিচার বিভাগকে উপেক্ষিত করা ও নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গণহারে প্রত্যারের প্রস্তাবেরও ব্যাখা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এজেড/এসএইচ