ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

বাংলানিউজকে আল্লামা মাসউদ

‘জীবনের প্রতি সেকেন্ডকে বোনাস মনে করি’

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
‘জীবনের প্রতি সেকেন্ডকে বোনাস মনে করি’ ছবি: অনিক খান - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের টার্গেটে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদ। এক লাখ আলেম-ওলামা নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া দেয়ার পর উগ্রপন্থিরা তার প্রতি ছিলেন চরমভাবে নাখোশ।

ময়মনসিংহ: দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের টার্গেটে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদ। এক লাখ আলেম-ওলামা নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া দেয়ার পর উগ্রপন্থিরা তার প্রতি ছিলেন চরমভাবে নাখোশ।



আর এ কারণেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় গত ঈদুল ফিতরের জামাতে হামলা চালানো উগ্রপন্থিদের প্রধান টার্গেট ছিলেন তিনি। চলতি বছরের ৭ জুলাইয়ের কলঙ্কিত সেই ঘটনার পর কেটে গেছে প্রায় সাড়ে ৪ মাস।

সৌভাগ্যক্রমে সেদিন প্রাণে বেঁচে যাওয়া ফরিদ উদ্দিন মাসউদ নিজের জীবনের প্রতি সেকেন্ডকে বোনাস মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘ওরা আগে এতদিন হুমকি দিয়ে আসছিল। আর শোলাকিয়ায় প্রথম সরাসরি আক্রমণের শিকার হতে যাচ্ছিলাম। জঙ্গিদের ক্যালকুলেশনে কোন ভুল ছিল না। কারণ সব সময়ই হেলিকপ্টার থেকে নেমে আমি সোজা মাঠে যাই।

ওইদিন মাঠে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা ছিল না। তাই আমি সার্কিট হাউজে চলে যাই। আর তখনই শুনি এ ঘটনা। আল্লাহ যতদিন ইচ্ছা আমাকে রাখবেন। যতদিন থাকবো ইসলাম ও মানবতার স্বার্থেই কাজ করে যাবো। ’

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর জামিয়া আশরাফিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের ফাঁকে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এ সব কথা বলেন।

ইসলাম কখনোই সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে প্রখ্যাত এ আলেম বলেন, ইসলাম হলো মৌলিকভাবে প্রেম, ভালোবাসা, উদার, অসাম্প্রদায়িক ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামের মূল বিষয় হলো আল্লাহ’র প্রতি ভালবাসা।

‘কবে থেকে আপনি জঙ্গিদের টার্গেট?’ জানতে চাইলে আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, শোলাকিয়াতেই কেবল আমি প্রথম টার্গেট ছিলাম না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যখন থেকে কাজ শুরু করেছি তখন থেকেই আমি ওদের টার্গেট। নাইন ইলেভেনের ঘটনার সময় আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম।

ইংল্যান্ডে কাউকে কাউকে সেদিন উল্লাস প্রকাশ করতে দেখে তাদের বলেছিলাম, মুসলমানদের জন্য এটি ভবিষ্যতে বিপদের কারণ।

‘বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ওদের (জঙ্গিদের) হাতে মৃত্যু হলে এটাকে গৌরব বলে মনে করবো’, জানিয়ে বর্ষীয়ান এ আলেম বলেন, জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ওলামায়ে কেরামের লক্ষাধিক দস্তখতের ফতোয়া  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, আগে যখন জঙ্গিদের ওপর অ্যাকশনে যেতাম তখন মনে দ্বিধার সৃষ্টি হতো। কারণ ওরা নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর বলতো। কিন্তু আপনাদের ফতোয়ার পর বুঝতে পারলাম ওদের আল্লাহু আকবর সত্য নয়।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া বিশ্ব পরিমণ্ডলেও প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসে আমাকে বলেছেন, এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান।

ফ্রান্সের একজন সাংবাদিক ৪ থেকে ৫ দিন আগে আমাকে বলেছেন, যারা এতোদিন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে তারা আপনার চেয়ে বড় কাজ করেনি।
জাপানের ডেপুটি হাই কমিশনার আমাকে বলেছেন হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আমরা কিছুটা বিমর্ষ ছিলাম। আস্থা নড়েবড়ে হয়ে গিয়েছিল। আপনাদের ফতোয়ার পর আস্থা ফিরে এসেছে।

যে দেশে এতো বেশি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সেখানে সন্ত্রাস জায়গা পাবে না। এ ফতোয়া আমাদের দেশের মর্যাদাকে বিপুল উচ্চতায় নিয়ে গেছে, বলেন তিনি।  

এক লাখ আলেমের ফতোয়া বিশ্বের মডেল দাবি করে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ওআইসি’র মহাসচিবের সঙ্গে ঢাকায় দেখা। তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়ায় তিনি নিজেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সদস্য দেশগুলোতে এ মডেল গ্রহণ করে প্রচার করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

৩০ খণ্ডের এ ফতোয়াকে একটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এ ফতোয়া আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, পর্তুগিজ, মালয় ও জাপানি ভাষায় তর্জমা হয়েছে। মূলত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিই ওদেরকে প্রতিহত করার বড় অস্ত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
এমএএএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।