এছাড়াও ২৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে রাজপথে অবস্থান এবং ১১ মার্চ খুলনা মহানগরীতে মহাসমাবেশেরও ঘোষণা দেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) হরতাল কর্মসূচি শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন তিনি।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু প্রমুখ।
হরতাল সফল হয়েছে দাবি করে আনু মুহাম্মদ বলেন, শত বাধা, ভীতি, ত্রাস সত্ত্বেও আমরা জানি বহু প্রতিষ্ঠানে বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি পালন করেছেন, বহু প্রাইভেট গাড়ি আজ রাস্তায় বের হয়নি। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই সময়টাতে সুন্দরবন নিয়ে তাদের চিন্তা ও স্বকীয়তায় সময় কাটিয়েছেন।
পুলিশ শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচিতে প্রতি ঘণ্টায় বারবার টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, জলকামান ব্যবহার করে বহুজনকে আহত করেছে বলেও অভিযোগ করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব।
একটা বন রক্ষার জন্য এমন একটা হরতালের কর্মসূচি শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ করেন তিনি।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুন্দরবন বিনাশী এই প্রকল্প নিয়ে সরকার যা বলছে জনগণ, মন্ত্রিসভার অনেকে, পুলিশ বাহিনী, সরকারের বুরোক্রেসি, সরকারি দলের লোক, শ্রমজীবী-পেশাজীবী কোনো পর্যায়ের মানুষ তা বিশ্বাস করে না। এতে করে সরকার সন্ত্রস্ত। তাদের ভীতি ও সন্ত্রস্তভাবের কারণে যখনই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতে দেখে তার ওপর হামলা করে।
তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির উপরে যে হামলা সরকার করেছে যে ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে তার মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে।
তবে এ কর্মসূচি একের পর এক অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত সর্বনাশা প্রকল্প বাতিল না হবে, ততদিন পর্যন্ত জনগণ থেমে থাকবে না।
জাতীয় কমিটির আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি রয়েছে জানিয়ে আনু মুহাম্মদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের নাই কোনো তথ্য, যুক্তি, নাই কোনো নৈতিক ভিত্তি। আপনারা অনৈতিক ভিত্তির ও একটা একগুয়েমির উপর দাঁড়িয়ে আছেন। লোভের ওপর, ক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকার, চিরস্থায়ী করার ওপর দাঁড়িয়ে আছেন।
যতই দিন যাবে, ততই সুন্দরবনের ক্ষতি হতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি সরকার সুন্দরবন বিনাশী এই প্রকল্প থেকে সরে আসবে।
সমাবেশে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য শেখ হাসিনা হাত পা বেঁধে রেখেছেন। প্রাকৃতি না থাকলে বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাস হয়ে যাবে।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ভারতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ না করতে পেরে এনটিপিসি শ্রীলঙ্কায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গেলে, সে দেশের আদালত বাতিল করার রায় দেয়। আর আমাদের সরকার প্রকৃতি ধ্বংস করা এই প্রল্পের জন্য পক্ষ নিচ্ছে।
গণসংহতির আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকান পাট, অফিস ও পথচারীরা এই হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা হরতালে কোন জ্বালাও-পোড়াও করিনি। কিন্তু সরকার ভীতু বলেই আমাদের প্রচারে ও মিছিলে হামলা করেছে পুলিশ।
হরতালের পক্ষে শাহবাগে গান গাওয়ায় সংস্কৃতিকর্মীদের আটক করা হয়েছে জানিয়ে সাকি বলেন, দমন-পীড়ন সরকারের শক্তির পরিচয় নয়, দুর্বলতার প্রমাণ।
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, সুব্দরবন রক্ষার আন্দোলনে দেশের ১৭ কোটি মানুষের সমর্থন রয়েছে। সুন্দরবনে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হলে দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, গরিব দেশের একটা সম্পদ সুন্দরবন। আর তা ভারতের স্বার্থে বলি দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। সারা দুনিয়াতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে। আর সকলের ফেলে দেওয়া প্রযুক্তি সরকার ব্যবহার করতে চাইছে। আল্ট্রাসুপার প্রযুক্তি শুধু শেখ হাসিনা জানেন। আর কারো কাছে এই প্রযুক্তির খবর নেই।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতি রোধে প্রযুক্তির জনক উজ্জ্বল কান্তি বলেছেন, আল্ট্রাসুপার প্রযুক্তি বলে কোনো প্রযুক্তি নেই। সরকারের আবিষ্কার করা বুদ্ধিজীবীরা প্রযুক্তি নিয়ে নাটকীয়তা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭/আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা
জেপি/এমজেএফ