জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে ওই নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ততই বিভিন্ন ধরনের আলোচনা উঠে আসছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের চিন্তার-ভাবনা চলছে বলে সম্প্রতি বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা এবং ওই সহায়ক সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপির প্রতিনিধিত্ব রাখার দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হতে পারে। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব তৈরির প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ধরনের কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়েই হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, আগামী নির্বাচনের আগে নির্বাচকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় বিএনপি তাদের দলের প্রতিনিধি দিতে চাইতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রতিনিধি দেওয়ার জন্য বিএনপি আশ্রয় নিতে পারে বিভিন্ন কৌশলেরও। এমনকি আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের শর্ত হিসেবে এই দাবিটিকেই সামনে নিয়ে আসতে পারে।
সংবিধান অনুযায়ী গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির থাকার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানে চলমান সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। অনির্বাচিত কোনো প্রতিনিধির ওই নির্বাচনকালীন সরকারে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বিএনপি এ ধরনের কোনো শর্ত বা দাবি তুলেও কোনো কাজ হবে না বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এ কারণে বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিও নেই। আবার ওই নির্বাচনের আগে সংসদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো। ওই প্রস্তাবও তখন প্রত্যাখ্যান করেছিলো বিএনপি। তাদের দাবি ছিলো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদ্ধতি বাতিল করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা হয়। সেই অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গত নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়েছিলো এবং আগামীতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানান।
তবে বিএনপির এ ধরনের প্রস্তাবের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেউ এখনই সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। তারা বলছেন, এ ধরনের কোনো প্রস্তাব এখনও বিএনপি দেয়নি। তাই আগ বাড়িয়ে এ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করলে আলোচনায় আসার সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর নির্বাচনকালীন সরকার হবে সংবিধান অনুযায়ী সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর গত দশম সংসদ নির্বাচনের আগে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। আগামীতেও একইভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। সংসদে প্রতিনিধি যখন ছিলো তখন বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারে আসেনি। এখন সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি নেই, তাই এটা নিয়ে কথা বলারও কোনো সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার সবই হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানে সেটা বলা আছে সেটাই হবে। সংবিধানের বাইরে কিছুই হবে না।
নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানও একই ধরনের মন্তব্য করে বাংলানিউজকে বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলা আছে সেভাবেই হবে। অন্য কোনো চিন্তা আমরা করি না।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ