এজন্য তিনি এমপিদের জনসম্পৃক্ততা আরাও বাড়ানো এবং দলীয় কোন্দল ও দূরত্ব মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। জনবিচ্ছিন্ন হলে কেউ পার পাবে না বলেও সাবধান করেছেন তিনি।
এদিকে, বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী ও গণবিরোধী দল সেটা কানাডার আদালতেও প্রমাণ হয়েছে। সেই বিষয়টি জনগণের সামনে জোড়ালোভাবে তুলে ধরারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় সংসদের নবম তলায় সরকারি দলের সভা কক্ষে আয়োজিত এক বৈঠকে শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি শেষ হয় রাত পৌনে ৯টায়।
বৈঠকে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যেতে হবে, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরো বাড়াতে হবে। কেউ নির্বাচনী এলাকায় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। কে কী করছেন, কার কী অবস্থা তার সব রিপোর্টই আমার কাছে আছে। জনগণ থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হলে পার পাবেন না। তাই জনগণের কাছে যান, ভালো কাজের মাধ্যমে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন। সরকারের উন্নয়ন-সফলতাগুলো জনগণের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
সভার একটি সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। এরা মানুষ মারে, পুলিশ মারে, নাশকতা করে। বিএনপি সন্ত্রাসী দল তা কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই আগুণ সন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞসহ সব অপকর্মের কথা জনগণের সামনে বেশি করে তুলে ধরে এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক করতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়গুলোও বুকলেট তৈরি করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে।
দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল, বিভেদ দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সব সংসদ সদস্যের (এমপি) নৈতিক দায়িত্ব। এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি যেখানে যেখানে সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত নিরসন করতে হবে। এখনও যথেষ্ট সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে সব ধরনের কোন্দল-বিভেদ মিটিয়ে ফেলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মাসেতু সম্পর্কে সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়েই প্রমাণিত হয়েছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আর দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগও ছিল না। আমরা বিশ্ব ও জাতির সামনে প্রমাণ করতে পেরেছি এতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
সব এমপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কী কী উন্নয়ন করেছেন, উন্নয়নমূলক কাজের কী কী বাকি রয়েছে, আর কী করলে জনগণের মন জয় করা যাবে- তা একটি রিপোর্ট আকারে তৈরি করে সংসদীয় দলের সম্পাদকের কাছে জমা দেবেন। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সম্পাদক নির্বাচন করা হয় অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, আগে দলের সাধারণ সম্পাদকই সংসদীয় দলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তার একার পক্ষে এতো দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। এ কারণেই নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে এবার সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, শাজাহান খান, ড. হাছান মাহমুদ, মুন্নুজান সুফিয়ান, একেএম শামীম ওসমান, মনিরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন প্রমুখ। বৈঠক শেষে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
এসকে/এসএম/এসআই