রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে তাঁতী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সবাই লক্ষ্য করেছেন, তাঁতী ভাইয়েরা লক্ষ্য করেছেন, আমি কিন্তু কখনো ফ্রেঞ্চ শিপন পরি না।
তিনি বলেন, বিদেশে যত উপহার দেই। সেখানে উপহারের খাতায় কিন্তু সবসময় দেশে তৈরি কাপড় রাখি, উপহার দিয়ে থাকি।
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও তাঁতীদের বোনা কাপড় ব্যবহারে উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাড়ি আমরা পরি। আমার তো মনে হয় ছেলেরাও শার্ট, পাঞ্জাবি সব কিছু তাঁতীদের তৈরি কাপড় থেকে পরতে পারে। এগুলো দেখতেও সুন্দর।
‘আমাদের ছেলে-মেয়েদেরও উন্নত মানের খদ্দর কাপড় কিনে দেই, পাঞ্জাবিও কিনে দেই তারা পরে। ’
ঐতিহ্যবাহী মসলিনকে ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষণা চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
খদ্দর কাপড়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, খদ্দরের তৈরি কাপড় আমাদের দেশে আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য আরামদায়ক।
তিনি বলেন, খদ্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা শিল্প। খদ্দরের তৈরি কাপড় এক সময় দেশে ফ্যাশন ছিলো। কিভাবে যেন সেই চাহিদা ও গুরুত্ব হারিয়ে যেতে বসলো। আশা করছি পুরোনো সেই ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
‘ভারতের খদ্দরের চাহিদা রয়েছে। অনেক উন্নত মানের খদ্দর সেখানে হয়। ’
তাঁত শিল্পের বিকাশে ডিজাইন, সুতা, পাকা রং এর আরও উন্নতি করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তাঁত শিল্পের উন্নয়নে তার সরকারের ঋণ সুবিধা প্রদান, প্রশিক্ষণ, ফ্যাশন ডিজাইন ও ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট, তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, শুল্ক মুক্ত আমদানিসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
বিভিন্ন সেক্টরের মতো তাঁত শিল্পকেও আধুনিক করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁত শিল্পকে উন্নত করতে চাই, সমৃদ্ধ করতে চাই। এটা আমরা করবো। সেজন্য যা যা প্রয়োজন সব করবো।
তাঁত তৃতীয় বৃহৎ শিল্প জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর পর বহু তাঁত শিল্প বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। এক সময় বিভিন্ন অঞ্চলে গেলেই অনবরত তাঁতের খট খট আওয়াজ পাওয়া যেতো। এখন অনেক জায়গায় সেই খট খট শব্দ আর পাওয়া যায় না। সবই যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়।
আবারও তাঁত শিল্পের সুদিন ফিরে আসছে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মাঝে এতবেশি সিনথেটিক কাপড়ের ব্যবহার বেড়েছিলো। এখন আবার মানুষ তাঁতের কাপড়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, এর ব্যবহার বেড়েছে।
নেতা হয়ে বসে থাকলে চলবে না
তাঁতী লীগকে তাঁতীদের কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসবে। ...নেতা হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাঁতীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো দেখতে হবে। তাদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
তাঁতীদের সন্তানরা যেন লেখাপড়ার সঙ্গে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তাঁতী লীগকে বলবো সংগঠনকে গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের যে কাজগুলো করছি। তার ব্যাপক প্রচার করতে হবে সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী।
আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যে যে বিষয়ে সংগঠন করছে, সে সেই সম্প্রদায়ের মানুষের যেন কল্যাণ হয়, উন্নতি হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। তাদের সমস্যাগুলো বের করতে হবে, সমাধানের পথ দেখাতে হবে।
‘সংগঠন করা মানে নেতা হয়ে বসে থাকা না। ’
প্রতিটি সংগঠনকে নীতি-আর্দশ মেনে চলারও নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, তাঁতী লীগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সংগঠন। কিন্তু সব সময় অবহেলার শিকার। এটাও ঠিক।
সকাল ১১টায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি তাঁতী লীগ নেতাদের নিয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তেলন করেন। এরপর পায়রা অবমুক্ত করেন। পরে তিনি তাঁতকল পরিদর্শন করেন।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭/আপডেট ১৬৫৫ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ/
আরও পড়ুন
** শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে তাঁতী লীগকে
** ১২০ একর জমিতে হচ্ছে তাঁতপল্লি