ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় এমপি রানার বিচার শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় এমপি রানার বিচার শুরু কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় এমপি রানাকে। ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আদালত।

আগামী ১৮ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলায় ২৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে।

এর মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার শুরু হলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।  

অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হচ্ছেন- প্রধান আসামি এমপি রানার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা, আনিসুল ইসলাম রাজা, কবির হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ মিয়া, চান, নুরু, সানোয়ার হোসেন, দাঁতভাঙা বাবু, ফরিদ হোসেন, আবদুল হক এবং সমির হোসেন।

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন এমপি রানাসহ চারজন, জামিনে আছেন তিনজন। রানার তিন ভাইসহ পলাতক বাকি সাতজন।

শুনানি শেষে বুধবার (০৬ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আবুল মনসুর মিয়ার আদালত দণ্ডবিধির ৩০২/ ১২০/৩৪ ধারায় এ অভিযোগ গঠন করেন।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কারাগার থেকে হাজির করা হয় চার আসামিকে। জামিনে থাকা তিন আসামিও হাজির হন।

সংসদ সদস্য রানাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেলা ১১টায় আদালতে আনা হয়।

আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জহির। তিনি কারাগারে এমপি রানার চিকিৎসা ও অভিযোগ গঠন না করে আসামিদের অব্যাহতি এবং মামলার পুন:তদন্তের তিনটি আবেদন জানান। আদালত চিকিৎসার আবেদনটি আমলে নিয়ে অন্য দু’টি খারিজ করে দেন।

বাদীপক্ষে অভিযোগ গঠনের আরজি জানিয়ে শুনানি করেন আইজীবী এস আকবর খান।

শুনানিতে আদালত হাজির হওয়া আসামিদের দোষী না নির্দোষ বলে জানতে চাইলে তারা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। পরে ১৪ আসামির সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

দুপুর ১২টার দিকে এমপি রানাকে কঠোর নিরাপত্তায় কাশিমপুর কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাকে টাঙ্গাইল আদালতে হাজির করাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আদালত ও এর আশপাশের এলাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

শুনানি চলাকালে এমপি রানা ও তার তিন ভাইসহ ফারুক হত্যা মামলার আসামিদের বিচার ও ফাঁসির দাবিতে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এস আকবর খান জানান, এর আগেও অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ এমপি রানাকে আদালতে হাজির না করায় এ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আটবার পিছিয়েছে। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের আবেদনে গত ২৩ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মামলার ধার্য দিনে এমপি রানাকে বিচারিক আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।   এর প্রেক্ষিতে নবমবারে তাকেসহ চার আসামিকে হাজির করায় শুনানি শেষে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী এ মামলার বাদিনী নাহার আহমেদ বলেন, ‘আমি অত্যন্ত খুশি। দীর্ঘদিন পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হওয়ায় খুনিদের সঠিক বিচার হবে বলে আশা করছি’।

আসামিপক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জহির জানান, কারাগারে চিকিৎসার জন্য আবেদন, পুন:তদন্ত ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়। চিকিৎসার আবেদনটি আমলে নিয়েছেন আদালত।

অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান তিনি।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির সর্বশেষ ধার্য দিনে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা আদালতকে জানান, পাইলসের রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় এমপি রানা ভ্রমণের উপযোগী নন বলে কারাগারের সহকারী সার্জন জানিয়েছেন। তাই তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগের দিন ১২ জুন জানানো হয়, জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানা, কোমর ব্যথা ও হৃদরোগের ব্যথার কারণে রানা ভ্রমণের উপযোগী নন।

গত বছরের ০৯ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির প্রথম দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এর আগেরদিন কাশিমপুর কারাগার থেকে এমপি রানাকে বুকে ব্যথাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে।

২০১৪ সালের আগস্টে এ মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেফতার হন। আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিতে এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর থেকে এমপি ও তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান।

গত বছরের ০৩ ফেব্রুয়ারি ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান এমপি রানা। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন। উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে বেশ কয়েকদফা আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।