ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘মা বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯
‘মা বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে’

ঢাকা: বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সাহস ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা বীরের মতো বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে গণভবন প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের আদর্শ ও ত্যাগের রাজনীতি করার পরামর্শ দিতে গিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা তিনিও কিন্তু নিজের জীবনটা দিয়ে গেছেন।

৩২ নম্বর বাড়িতে যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়, আমার মাকে খুনিরা বলেছিল আপনি চলেন, আমার মা বললেন কোথাও তো যাবো না। ওনাকে খুন করেছো আমাকেও শেষ করে দাও। আমি এখান থেকে এক পা-ও নড়বো না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা কিন্তু ওদের কাছে জীবন ভিক্ষা চায় নি। তাদের কাছে কোন আকুতি মিনতি করেননি। বীরের মত বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে। সেই কথা সকলকে মনে রাখতে হবে। ’

‘৩২ নম্বরে লাশগুলো পড়েছিল, কোন দাফন-কাফন দেওয়া হয়নি। ওই বনানী কবরস্থানে মাটি খুঁড়ে রেখে দেওয়া হয়েছিল। ’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আর বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল টুঙ্গীপাড়ায়, তখন অনেক দুর্গম পথ ছিল, ভেবেছিল কেউ কখনো সেখানে যেতে পারবে না। রিলিফের শাড়ির পাড় ছিঁড়ে তাকে দাফন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের কাছ থেকে তার নামটাও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। ’

বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার সময় ও বিভিন্ন সময় দল ও আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করতে  বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেওয়াসহ সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে বঙ্গমাতার ত্যাগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মানুষকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) সারাজীবন দিয়েই গেছেন, কোন কিছু নিয়ে যাননি। তিনি শুধু এদেশের মানুষের জন্য সারাটা জীবন দিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত বুকের রক্ত দিয়ে গেছেন। ’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশের দ্রুত এগিয়ে যাওয়া রুখে দিতে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড কেন? তিনি এ দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে যান। এই স্বাধীনতা অর্জনের পরে মাত্র সাড়ে ৩ বছর তিনি হাতে সময় পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে তিনি যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন এটাও একটা বিরল ইতিহাস। ’

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সৈনিক হিসেবে ত্যাগী কর্মী হয়ে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে সত্যিকারভাবে তার আদর্শ বুকে ধারণ করে তার মত ত্যাগী কর্মী হিসেবে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। ’ 

তিনি বলেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে আদর্শের সঙ্গে ছাত্রলীগের নীতি-আদর্শ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবে।  দেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যাবে যেন জাতির পিতার আত্মা শান্তি পায়। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে-জাতির পিতা তার সব কিছু ত্যাগ করে গেছেন মানুষের কল্যাণে। সেই মানুষের কল্যাণে কতটুকু আমরা কাজ করতে পারলাম; সে হিসেবটা আমাদের করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘কতটুকু আমরা দিতে পারলাম সেটাই একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য সবচেয়ে সার্থকতা। ’ 

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমার বাবার হাতে গড়া, আমিও ছাত্রলীগের কর্মীই ছিলাম। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। ’ 

১৫ আগস্টে সব হারানোর বেদনা নিয়ে দেশের জন্য কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বলবো, সেই শোককে বুকে নিয়ে, সেই আদর্শকে বুকে নিয়ে, সব ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে আমরা কাজ করেছি। ’

‘নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কোনও চাওয়া পাওয়া নেই, চাওয়া-পাওয়া রাখিনি। একটাই যে মানুষকে কী দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে জাতির জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, কষ্ট করে গেছেন, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি সেটাই বিবেচনা করেছি। নিজে কী পাবো না পাবো বা ছেলে মেয়ে কী পাবে না পাবে সে চিন্তা আমাদের ছিল না। ’

‘আমরা দুটি বোন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়বার জন্য সব কিছু ত্যাগ করে কাজ করে যাচ্ছি। ’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেইন, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের আহমেদ।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে তার হাতে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, শেখ রাসেলের প্রতিকৃতি তুলে দেয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতিকৃতি উপহার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
এমইউএম/এমএএম/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।