ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মোজাফফর আহমদের চেতনাকে ধারণ করার আহ্বান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯
মোজাফফর আহমদের চেতনাকে ধারণ করার আহ্বান

ঢাকা: অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাকে শক্তিশালী করতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের চেতনাকে ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। একইসঙ্গে তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান।

সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাম-প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জন্য আয়োজিত শোকসভায় নেতারা এ আহ্বান জানান।  

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনায় তিনি প্রখর ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু যেমন আপস করেননি, অধ্যাপক মোজাফফরও তেমনি চেতনার সঙ্গে আপস করেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযু্দ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সব সময় রাজনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি আগামী দিনে সংগঠিত হোক, ঐক্যবদ্ধ হোক- এটিই আমরা চাই। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় আসুক।  

‘আমরা চাই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুক। এটা হলে বিএনপি-জামায়াতের জায়গায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিশালী বিরোধী দল হবে। ’

নাসিম বলেন, আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এই রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অশুভ শক্তির চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। আমরা সারা দুনিয়ার কাছে আবেদন জানাই, মিয়ানমার যাতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয় সেই জন্য চাপ সৃষ্টি করতে। এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। এই প্রশ্নে কোনো রাজনীতি নয়, কোনো দলবাজি নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
 
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সারা জীবন একটি আদর্শ ও বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি আপসকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার নেননি। তিনি বলেছেন, আমি পুরস্কারের জন্য সংগ্রাম করিনি, আমি জনগণের জন্য সংগ্রাম করেছি।  

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিজয়কে ধরে রাখতে হলে আজ ঐক্যকে ধরে রাখা দরকার। আজও জঙ্গিরা এখানে সেখানে হানা দিচ্ছে। আমরা যদি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে বুঝি, তার আদর্শকে বুঝি, তাহলে ঐক্যকে আরও সংহত করতে হবে। যাতে জঙ্গি ও তাদের সহযোগী জামায়াত, বিএনপি আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।  

কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, বাংলাদেশের জন্য একটি ট্রাজেডি হলো মুক্তিযু্দ্ধের পর ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি বিরোধী দল হতে পারেনি। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি যদি বিরোধী দলে থাকতো, তাহলে মুক্তিযু্দ্ধের স্বপক্ষের একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হত। বিএনপি-জামায়াত যে বিপদ, সেটা আসত না। মোজাফফর আহমদ কখনও নীতির সঙ্গে আপস করেননি। মাওলানা ভাসানী এক বার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, আরেকবার চীনের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মোজাফফর আহমদ মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হননি।  

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও ন্যাপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ ভট্টাচার্য্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি বাংলাদেশের হয়ে জাতিসংঘে ভোট না দিত, তাহলে হয়তো আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন অষ্টম নৌবহর পাঠিয়েছিল। আর সোভিয়েতের এই ভূমিকা সম্ভব হয়েছিল কমরেড মণি সিংহ ও অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কারণে।  

ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ইতিহাসে যার যে অবদান, সেটা মূল্যায়ন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ছিল, তখন ভারতকে আমাদের পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর পেছনে মোজাফফর আহমদের অবদান ছিল।  

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মখছুদ আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ০২, ২০১৯ 
এসকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।