ঢাকা: ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করে মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীরের পক্ষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “তদন্তে প্রভাব খাটাচ্ছি কি না এটা যিনি তদন্ত করছেন তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান খায়রুল কবির খোকন বাংলানিউজকে বলেন, “দলের হাই কমান্ড ছাড়া প্রভাব বিস্তার করার মতো কেউ নেই। আমার এখানে কোনো এজেন্ডা নেই, কোনো সিন্ডিকেট নেই। আমার কোনো পছন্দ অপছন্দও নেই। দলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আমাকে হাই কমান্ড ভালো করে চেনেন। তা না হলে এত নেতা থাকতে আমাকে কেন দায়িত্ব দেবেন। ছাত্রদলের কাউন্সিল কমিটিরও আহবায়ক করা হয়েছিল আমাকে। আমি তদন্ত করে যেটা সঠিক সেটাই রিপোর্ট দেব। ”
সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুম (যিনি একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন মালয়শিয়ায় অবস্থান করছেন) এসএম জাহাঙ্গীরকে নির্দোষ প্রমাণ করে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য খায়রুল কবিরের ওপর প্রভাব খাটাতে চাচ্ছেন, এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “এটা দলের ইন্টারনাল ইনকোয়ারির বিষয়। এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে আশা করি শিগগিরই একটা রিপোর্ট আমরা পাবো। সেটার ওপর ভিত্তি করে ১৮-আসনের মনোনয়ন শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। ”
ঢাকা-১৮ আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। গত ১২ সেপ্টেম্বর এই নয় জনকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। ওই দিন দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী এম কফিল উদ্দিন আহমেদ ও এসএম জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কফিল উদ্দিনের ১৭ জন সমর্থক আহত হয়। কফিল উদ্দিন প্রথম থেকেই জাহাঙ্গীরকে দায়ী করেন এই সংঘর্ষের জন্য।
তিনি বলেন, “সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাত করে জাহাঙ্গীরের শালা দিপু সিকদারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমার সমর্থকেরা আহত হয়েছে। ”
এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বর্তমানে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে দুই পক্ষের লোকদের কাছ থেকে বক্তব্য শুনেছেন কমিটির প্রধান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন প্রার্থী বৃহস্পতিবার বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, আমরা জানতে পেরেছি রুহুল কবির রিজভী ও এমএ কাইয়ুম তাদের পছন্দের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থীতা ঘোষণা দেওয়ারও চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তারা বলেন, সংঘর্ষ সমর্থকদের মধ্যে হলেও এর জন্য মূল দায়ী জাহাঙ্গীরকে বাদ দিয়ে নিচের লেভেলের কয়েকজনকে সাজা দিয়ে জাহাঙ্গীরকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। যাতে করে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন পেতে সুবিধা হয়।
ইতোমধ্যে এ ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ ও ঘটনার ফুটেজ লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছেন সাত প্রার্থী।
জানতে চাইলে, সাবেক ছাত্রনেতা ওই আসনের মনোনয়প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন বাংলানিউজকে বলেন, “ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিখিতভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। এখন তদন্ত চলছে। দেখা যাক তদন্ত রিপোর্ট কী আসে। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই আমি মেনে নেব। ”
আগামী ১৩ অক্টোবর ওই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ইতোমধ্যে আসনটিতে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করলেও সংঘর্ষের কারণে বিএনপির মনোনয়ন দিতে দেরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২০
এমএইচ/এজে