ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

কারা আসছেন মহানগর বিএনপির দুই কমিটিতে

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
কারা আসছেন মহানগর বিএনপির দুই কমিটিতে

ঢাকা: আন্দোলন সংগ্রামে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিএনপির ঢাকা মহানগরের দুই কমিটি। সাংগঠনিক অদক্ষতা, পুরো মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারা, নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়ানো, সরকারবিরোধী শক্ত কোনো আন্দোলন গড়ে না তুলতে পারার অভিযোগ খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাই করছেন।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগের কথা জানা গেছে।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, যে আশা নিয়ে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর কমিটিকে ভাগ করে উত্তর ও দক্ষিণ নাম দিয়ে দুটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। উত্তরে এমএ কাইয়ুম-আহসান উল্লাহ হাসান ও দক্ষিণে হাবিব উন নবী সোহেল-কাজী আবুল বাশার কমিটি তেমন কোনো ক্যারিশমা দেখাতে পারেনি। ফলে হাইকমান্ড নতুন করে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অবশ্য মহানগর কমিটির বর্তমান নেতৃত্ব তৃণমূলের এই অভিযোগ মেনে নিতে নারাজ। তাদের দাবি ২০১৭ সালে কমিটি গঠনের পর বড় কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। ছোটখাটো যেসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে তা সফলভাবেই তারা সম্পন্ন করেছেন। গত প্রায় দেড় বছর তো করোনা মহামারির কারণে সাংগঠনিক ও সরকারবিরোধী কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।

দলীয় নেতাদের অভিযোগ, চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোর পরে মহানগর বিএনপি কোনো আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে পারেনি। চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে যে ধরনের আন্দোলন হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই দেখাতে পারেনি। তাদের দাবি ২০১৭ থেকে ২০২১ দীর্ঘ পাঁচ বছরে সরকার তাদের হাতে বহু ইস্যু তুলে দিলেও কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে কোনো কর্মসূচিই দেয়নি মহানগর বিএনপি।

তাদের পক্ষে অবশ্য কথা বলেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি দাবি করেছেন, মহানগরের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে কখনও আন্দোলন সংগ্রাম দানা বাঁধেনি।

বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের দায়ী করে তিনি বলেন, এ দেশের যত আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে উঠেছে তা ওই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ছাত্ররাই সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। পরে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তার অভিযোগ বর্তমান ছাত্র নেতৃত্ব সেরকম কোনো আন্দোলনের সূচনা করতে পারেনি। তিনি বলেন, কোনো ইস্যুতেই ছাত্রদলের একটি মিছিল তিনি দেখেননি।

জানা গেছে, শিগগিরই ঢাকা মহানগর বিএনপির দুটি কমিটি পুনর্গঠন হবে। এ ক্ষেত্রে পুরোনোদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হতে পারে। আবার পুরোনো ও নতুনদের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে নতুন কমিটি। যা ইতোমধ্যে লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। ওখান থেকে অনুমোদন পেলেই দলীয় মহাসচিব স্বাক্ষরিত কমিটি ঘোষণা হবে।

সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে রেখে মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ কমিটিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হতে পারে। দক্ষিণে দুই শীর্ষ পদেই থাকছে নতুন চমক। আর উত্তরে আগের কমিটির সভাপতি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে ভারপ্রাপ্ত আব্দুল আলীম নকি থাকবেন কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি। এ পদে পরিবর্তনও হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। এক দশক ধরে রাজপথে দাঁড়াতেই পারছে না তারা। ব্যর্থতার দায়ে পুরোনা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০১৭ সালে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিও গত পাঁচ বছরে তেমন কিছু করতে পারেনি।  

তিনি বলেন, নতুন কমিটিতে থাকবে অনেক চমক। কমিটিতে আসছেন নতুন অনেকেই। আসছেন সাংগঠনিকভাবে সুপরিচিত ও ইমেজধারী নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ। মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাদেরও মূল্যায়ন করা হচ্ছে এ কমিটি গঠনে।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অতীতের সব ব্যর্থতা মুছে ঢাকায় ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। রাজপথে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে হলে ঢাকা মহানগরীর নেতাদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। তাই ঢাকা মহানগর কমিটি ঢেলে সাজাতে চাইছে হাইকমান্ড। এ জন্য সাংগঠনিক দিকসহ সবকিছু বিবেচনা করে সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ও তরুণ নেতৃত্বের হাতে দেয়া হচ্ছে দায়িত্ব। নেতৃত্ব খুঁজতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। তিনি উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃত্বে যারা যোগ্য তাদের একটি তালিকা পাঠান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজ থেকেও খোঁজ নিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, সবাই বলে দলের আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকা মহানগরীর নেতারা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ঢাকার নেতৃত্বে ঢাকার বাইরের নেতাকে দিয়ে করার ফলেই সফল হয়নি। এছাড়াও কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। তবে অতীতে যাই হোক আমাদের একটাই চাওয়া, আগামীতে যাতে এমন কমিটি ঘোষণা করা হয় যেটা আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব  দেবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আহ্বায়ক পদে অনেকের নাম শোনা গেলেও সদস্য সচিব পদে সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সম্ভাবনাই বেশি। আহ্বায়ক পদে বর্তমান দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুন্নবী খান সোহেল, অবিভক্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি নবীউল্লাহ নবীর নাম শোনা যাচ্ছে।

এদিকে উত্তরে আহ্বায়ক পদে বর্তমান কমিটির সভাপতি এম এ কাইয়ুমকে রাখার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া সদস্য সচিব পদে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব এবং সাবেক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আতিকুল ইসলাম মতিন (মোহাম্মদপুর)  হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগ করে সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দক্ষিণের সভাপতি, কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। ওই সময়  উত্তরে এমএ কাইয়ুমকে সভাপতি, আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পার হওয়ায় অনেক আগেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। আংশিক কমিটি ঘোষণার সময়ে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্র থেকে এক মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ বছরেও সেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

২০২০ সালের ৭ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। তার কিছুদিন পর ২২ জুন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকিকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ অবস্থায়ই চলছে মহানগরের দুই কমিটি।

জানতে চাইলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। যে কোনো কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি গঠনই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে বর্তমান করোনা মহামারির মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক বাধা রয়েছে। আশা করি দলের হাইকমান্ড সময়মতো কমিটি ঘোষণা করবে।

নেতৃত্বে কারা আসবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad