ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নামে নামে যমে টানে!

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২১
নামে নামে যমে টানে!

সাভার (ঢাকা): শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে সাভারের আশুলিয়ায় অপপ্রচার ও হয়রানির স্বীকার হয়েছেন তৃণমূলের দুই আওয়ামী লীগের নেতা গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও মো. দেলোয়ার হোসেন মাদবর। এক কথায় নামে নামে যমে টেনেছে তাদের।

সম্প্রতি আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে নতুন করে আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়া হয়। তবে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে মিল থাকার কারণে তাদের বিএনপির নেতাকর্মী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মাদবর এ কথা জানান।

তারা জানান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে গিয়াস উদ্দিন মোল্লা ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। এখন তিনি হয়েছেন এই ওয়ার্ডের সভাপতি। আর ২০১০ সালের যুবলীগের ইয়ারপুর ইউনিয়নের কমিটিতে দেলোয়ার হোসেন মাদবর ছিলেন ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। এখন তিনি হয়েছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

গিয়াস উদ্দিন মোল্লার নামে যে বিএনপির কাগজপত্র দেখানো হচ্ছে সেটা আরেক গিয়াস উদ্দিন মোল্লা তার বাবার নাম লাল মিয়া মোল্লা (বুছাই মোল্লা)। তিনি বিএনপির সঙ্গে এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বাবার নাম মৃত ইউনুস মোল্লা। আর দেলোয়ার হোসেন মোল্লার নামে যাকে বিএনপির বলা হচ্ছে তিনি বিএনপিই করে। তবে দেলোয়ার হোসেন মাদবর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই করে আসচ্ছেন আগে থেকে। দেলোয়ার হোসেন মাদবরের বাবার নাম মো. সুলতান মাদবর ও দেলোয়ার হোসেন মোল্লার বাবার নাম মৃত শুকুর আলী মোল্লা।

ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবগঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোটো থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ও আমরা পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ। আমার বাবাও আওয়ামী লীগ করতেন। আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর বাসায় যেতেন, তিনি একজন শিল্পী। তিনি গান করতেন বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়ে। একটা বিষয় দেখেন ইয়ারপুর ইউনিয়নের সভাপতি কাদের দেওয়ান। তিনি থাকা কালীন ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটিতে আমি ছিলাম সাংগঠনিক সম্পাদক। এখন আমি হয়েছি সভাপতি। তার নিদের্শনায় আমরা এতোদিন রাজপথে ছিলাম। আজ সেই বলছে আমি নাকি বিএনপি করি। আমার কথা হচ্ছে আমি যদি বিএনপিই করতাম তাহলে আমি তার কমিটিতে থাকি কি করে।

তিনি আরও বলেন, আচ্ছা বুঝলাম নামে নাম একটা থাকে গিয়াস উদ্দিন মোল্লা। আমার এলাকায় আরেকজন আছে গিয়াস উদ্দিন মোল্লা আপনারা তা যাচাই করেন। সেই গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বিএনপি করে তিনি এখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দিন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমি গিয়াস উদ্দিন মোল্লা। আমি ছোটো থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এখানে নাম নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আওয়ামী লীগের গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বাড়ি আর আমাদের বাড়ি একই সঙ্গে। তিনি ও তার বাবা সব সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। আর বিএনপি করলে আমরা অন্তত জানতাম।

অন্যদিকে একই ওয়ার্ডের নবগঠিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মাদবর বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২০১০ সালে যুবলীগের কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। তার আগে থেকেই আমি ছাত্রলীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার সম্পূর্ণ পরিবার আওয়ামী লীগের। আমি দীর্ঘদিন যুবলীগের দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমার কাজে আশ্বস্ত হয়ে আমার দক্ষতা দেখে আমাকে সিনিয়র নেতারা ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেন। আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণই মিথ্যা। কারণ যে দেলোয়ারের নাম জড়িয়ে আমাকে বলা হচ্ছে আমি বিএনপি করি সেই দেলোয়ার আমি না। আমার এলাকারই আরেক দেলোয়ার। তার পুরো নাম দেলোয়ার হোসেন মেল্লা আর আমার নাম দোলোয়ার হোসেন মাদবর। তিনি কিসের রাজনীতি করে সেটা আমি জানি না। তবে শুনেছি তিনি বিএনপির সঙ্গে জড়িত। তার নামের সঙ্গে আমার নাম কিছুটা মিল থাকায় আমাকে নিয়ে অপপ্রচার করছে কিছু মহল।

সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানববিষয়ক সম্পাদক হাজী মো. মফিজুর রহমান মাস্টার বলেন, আজ যে দুইজনকে নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে তারাই শুধু না তাদের পূর্বে সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের ঘরের সন্তান তারা। যারা এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছেন, তারা আসেন দেখে তদন্ত করেন। ইয়ারপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের আরও যারা আছেন তারা সাবাই খোঁজ নেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীন আওয়ামী লীগের নেতা জাহের আলী বাংলানিউজকে বলেন, আজ এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আমি নিক্ষুতভাবে চিন্তা করে দেখেছি। যারা এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ এনেছে তারা প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মী ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। গিয়াস উদ্দিন মোল্লা তার বাবার আদর্শে রাজনীতি করছেন। তার বাবা ইউনুস মোল্লাকে একজন শিল্পী হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাকে স্নেহ করতেন। তার কর্মদক্ষতা দেখেই আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে এই ওয়ার্ডের সভাপতিত্ব তাকে দিয়েছেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাকে বিএনপি বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ গিয়াস উদ্দিন মোল্লা নামে একজন রয়েছে যে বিএনপির রাজনীতি করে আমরা তাকে সবাই চিনি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মাদবর তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তিনি আসলে দেলোয়ার হোসেন মাদবর না সে দেলোয়ার হোসেন মোল্লা। এখানে দেলোয়ার হোসেন মাদবরকে পেচিয়ে দেলোয়ার হোসেন মোল্লা বানানো হচ্ছে। আর দেলোয়ার হোসেন মাদবর যুবলীগের রাজনীতি করে এসে আজ আওয়ামী লীগের পদ পেয়েছে। এটা তার প্রাপ্য। তাই আমি একজন প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলবো যারা তাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

গত ১৯ অক্টোবর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়ার পরপরই এই দুই নেতার নামে বিএনপির অভিযোগ তোলেন ইয়ারপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের দেওয়ান। এরপরেই বিষয়গুলো নিয়ে একটি মানববন্ধন হয়। পরবর্তীকালে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে গত ৩১ অক্টোবর সভাপতি কাদের দেওয়ানকে এসব অপপ্রচারের ব্যাখ্যা চেয়ে ৭ দিনের সময় দিয়ে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ইয়ারপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের দেওয়ানরে সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান শাহেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে আমাদের সিনিয়র নেতারা ৭ জনের একটি সমন্বয়ক কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটির সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েই এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। আর এসব নিয়ে যিনি অপপ্রচার করছেন তাকে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফারুক হাসান তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, যারা কমিটি দিয়েছে তারা তো ভেবে চিন্তেই দিয়েছে। তারপরেও আমিতো বলেছি যদি কোনো কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা লিখিত অভিযোগ দিক আমাদের কাছে আমরা বিষয়টি দেখবো। তদন্ত কমিটি করে দিবো। যদি দোষি হয় তাহলে বাতিল করে দিবো। তা না করে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ বিষয়ে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।